শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কর্ণফুলী-হালদাসহ প্রভাব পড়বে চার নদীতে

অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের বিরূপ প্রভাব পড়বে কর্ণফুলী, হালদা নদীসহ চট্টগ্রামের চার নদীর ওপর। অ্যামোনিয়া মিশ্রিত অ্যামেনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের বিষাক্ত পানি প্রবেশের ফলে মরণ ঘটতে পারে ওই নদীগুলোর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের। এমনকি জীববৈচিত্র্য হারাতে পারে ওই নদীগুলো। পরিবেশ বিশেযজ্ঞ প্রফেসর ইদ্রিস আলী বলেন, অ্যামোনিয়া খুব দ্রুত পানির সঙ্গে মিশে অ্যামোনিয়া হাইড্রো-অক্সাইড তৈরি হয়। এতে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে ওই পানি বিষাক্ত হয়ে যায়। ডিএপি  অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণে পর প্রচুর পানি ছিটিয়ে এবং কৃত্রিম বৃষ্টি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ওই পানি পরিশোধন না করায় গাঢ় বাদামি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। পরে নালা হয়ে ঢুকে পড়ে কর্ণফুলীতে। পরবর্তীতে তা কর্ণফুলীর সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য নদীতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে ওই নদীগুলো জলজ প্রাণী মরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শুরুতে অ্যামোনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের যে তীব্রতা ছিল তা দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসবে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘ডিএপির অ্যামোনিয়া মিশ্রিত অ্যামেনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের বিষাক্ত পানি জোয়ার-ভাটার কারণে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নদী ও খালে ঢুকে পড়বে। যদি অ্যামেনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের বিষাক্ত পানি ঢুকে পড়ে তা হলে ওই বিষাক্ত পানিতে থাকা সব প্রাণী মরতে শুরু করে। এতে বিপন্ন হতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের।’

জানা যায়, ডিএপিতে অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রচুর পানি ছিটানো এবং কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করা হয়। ওই পানি পরিশোধন না করায় গাঢ় বাদামি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছড়া ও বিভিন্ন খালে। পরে গোবাদিয়া খাল হয়ে গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অ্যামোনিয়া মিশ্রিত অ্যামেনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের বিষাক্ত পানি জোয়ার-ভাটার কারণে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত হালদা নদী, শিকলবাহা খাল, ইছাখালী খালসহ কয়েকটি খালে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে ওই নদী খালে বসবাস করা জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটবে।

চট্টগ্রামের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী নদীতে মিঠা, মিশ্র (মিঠা ও লবণাক্ত) ও সামুদ্রিক (লোনা) ১৪০ প্রজাতির বিচরণক্ষেত্র ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির ৬৬ এবং সামুদ্রিক লোনা পানির ৭৪ প্রজাতির। ইতিপূর্বে ৩০ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। বর্তমানে প্রায় ১১০ প্রজাতির মাছ রয়েছে কর্ণফুলীতে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এক সময় ৭৬ প্রজাতির মাছের বিচরণ ছিল। যার মধ্যে ২৭ প্রজাতি মাছের বিলুপ্তি ঘটে। বর্তমানে হালদা নদীতে ৪৯ প্রজাতি মাছের বিচরণ রয়েছে।

অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের দুদিন পর ওই এলাকায় পরীক্ষা চালায় পরিবেশ অধিদফতর। ওই পরীক্ষায় কারখানার পূর্ব ও উত্তর পাশের জলাশয়ের পানির নমুনায় পিএইচ যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৪ এবং ৮ দশমিক ৫৪। পানির পিএইচ আদর্শমান হিসাবে ধরা হয় ৬ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫। দুটি পয়েন্টের পানির নমুনার ডিও ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ৩৯ এবং ৪। এ ক্ষেত্রে ডিওর আদর্শ মান ধরা হয় ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫। সিওডি ছিল যথাক্রমে ৩২৪ ও ২৬৪। সেখানে আদর্শমান ২শ’র কম।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি’র অ্যামোনিয়া গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে গ্যাসক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কমপক্ষে দুই শতাধিক লোক। এ ঘটনা তদন্ত করতে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ও জেলা প্রশাসক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর