শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কবিতায় তিনি বলেছেন সাম্য ও মানবতার কথা। প্রিয়ার খোঁপায় তারার ফুল গুঁজে দেওয়ার পাশাপাশি ধূমকেতুর মতো জ্বলে উঠেছিলেন অন্যায় আর শোষণের বিরুদ্ধে। কখনো তিনি প্রেমের পূজারি ছিলেন, কখনো পুড়ছিলেন দ্রোহের আগুনে। প্রেম, দ্রোহ ও মানবতার কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গানে গানে তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। শেষ ইচ্ছানুযায়ী কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন। কবি নজরুলের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। জীবিকার তাগিদে কবি কখনো রুটির দোকানে কাজ করেছেন আবার কখনো মক্তবে পড়িয়েছিলেন। যাত্রা দলের হয়ে গানও লিখেছেন। এর ভিতর দিয়ে তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস,  ছোটগল্পসহ অসংখ্য রচনা। সংগীত রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেয়। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা, কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। আজ ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন কবির ভক্ত ও অনুরাগীরা।

ঢাকায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। একক বক্তৃতা দেবেন বিশিষ্ট গবেষক-প্রাবন্ধিক, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল করবে। বিএনপি সকাল ৭টায় কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবে।

সর্বশেষ খবর