রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পানির ঢেউয়ে উথাল-পাথাল পদ্মা

একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল I ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা

প্রতিদিন ডেস্ক

পানির ঢেউয়ে উথাল-পাথাল পদ্মা

ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় প্লাবিত রাজশাহীর পদ্মার চরাঞ্চল। আশ্রয়ের সন্ধানে দিশাহারা বানভাসি মানুষ। শ্যামপুর এলাকা থেকে তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের বিহার ও আশপাশ এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বাংলাদেশে পদ্মার পানি উথাল-পাথাল অবস্থায় রয়েছে। এতে একের পর এক নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, উজানে পানি বাড়া-কমার সঙ্গে পদ্মার পানি বাড়া-কমা নির্ভর করছে। পানি বৃদ্ধি পেলে তা বিপদসীমা অতিক্রম করবে। আবার কমতে থাকলে ভাঙন বাড়বে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ—

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ফারাক্কার উজানে পানি কমতে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ওয়াকিবহালরা এ অবস্থায় ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছেন। গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, আগের দিন পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর, চরবাগডাঙ্গা, নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গতকাল চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী ন্যাংড়ার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার প্রায় ২০০ বাড়ি এখনো প্লাবিত হয়ে আছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাট পর্যন্ত সড়কে তিন দিন ধরে পানি উঠছে। এই সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটি হাঁটুপানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১০ নম্বর বাঁধের প্রায় ১৫ মিটারে ধস নেমেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার জানান, গতকাল থেকে পদ্মার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে মহানন্দার পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় এ নদীতে পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার।

রাজশাহী : রাজশাহীতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পদ্মার পানি বেড়ে দাঁড়িয়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে আশঙ্কাজনকহারে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করায় রাজশাহীর নিম্নাঞ্চলগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বন্যা। এরই মধ্যে রাজশাহীর পবার মাঝচর, চরখানপুর, খিদিরপুর, বাঘার চর আতারপুর, চরলক্ষ্মীপুর, চরনারায়ণপুরসহ ১৫টি চর ডুবে গেছে। এসব এলাকায় বানভাসি মানুষের মাঝে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। পানি বাড়তে থাকায় চরখিদিরপুরের পুরোটাই তলিয়ে গেছে। খানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির চারদিকে এখন পানি। সেখানকার গরুর বিটটিও তলিয়ে গেছে। রাজশাহীর টি-বাঁধে সাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকালও সে নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। সেই সঙ্গে নদীতে ট্যুরিস্টদের নৌকা চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান জানান, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কালকের (সোমবার) মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ শহররক্ষা বাঁধটি ২১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার উচ্চতার। এ ছাড়া যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে, সেগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের দিকে পদ্মার শহররক্ষা বাঁধ ঠেকাতে নতুন করে বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে।

সেলফিতে ব্যস্ত ইউএনও : পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি দিনযাপন করছেন।। সাধারণ মানুষ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। তবে রাত ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলা কুষ্টিয়ার অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের চারটি ছবি পোস্ট করে বলা হয় তিনি বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। একটি ছবিতে দেখা যায় তিনি নৌকার ভিতর চেয়ারে অন্যদের সঙ্গে বসে আছেন, অন্য তিনটি ছবিতে তিনি নিজেই সেলফি তুলছেন। ভেড়ামারায় পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা থেকে মাত্র ৬ সেন্টিমিটার দূরে অবস্থান করছে। দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দুই ইউনিয়নের আরও চারটি গ্রাম। এ ছাড়া পাশের ভেড়ামারা উপজেলার দুটি গ্রামেও বন্যার পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এদিকে কিছু এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মুল্লুকচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর