রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের মারামারি খুলনা মেডিকেল ও পাবনায়

থমথমে খুলনা ক্যাম্পাস
বন্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিদিন ডেস্ক

খুলনা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে গতকাল দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়েও এদিন উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২২ জন আহত হন। গুরুতর আহত ছয়জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিন দফায় কলেজের ক্যাম্পাস, হোস্টেল, ক্যান্টিন ও হাসপাতালের নতুন নির্মিত আইসিইউ ভবনের মধ্যে এসব সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী কে-২৫ ব্যাচের সাফায়েত (২১), নাঈম (২১), জয় (২০), কামরুজ্জামান (২০), এনামুল ওরফে আকাশ (১৯), দেওয়ান ইমতিয়াজ (২২); কে-২৪ ব্যাচের রাজি বিল্লাহ (২১), খালিদ আঞ্জুম (২২), সনৎ কুমার (২২), প্রমোদ মণ্ডল (২১), সেষাদ্রি (২২), ফয়সাল তাজ (২১)-সহ ২২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে সাফায়েত, নাঈম ও জয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে।

জানা যায়, ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। তারা কলেজের ক্যাম্পাস, হোস্টেল ও ক্যান্টিনের মধ্যে শিক্ষার্থী মো. কামরুজ্জামান, এনামুল, দেওয়ান ইমতিয়াজ, রাজি বিল্লাহ ও খালিদ আঞ্জুমকে পিটিয়ে আহত করেন। ঘটনার পরপরই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের অন্য অংশ সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় প্র্রশাসনিক ভবনের জানালা ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। একই সময় হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ভবনের সামনে দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এখানে সাফায়েত, নাঈম, আবদুল আজিজ, সেষাদ্রি ও জয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরপর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল এক বিবৃতিতে খুলনা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধের ঘোষণা দেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহবুব সংঘর্ষের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, সংঘর্ষে দুই পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাসে আগুন দেন এবং বিভিন্ন ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালান। এর আগে তারা পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন, পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালালে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালান। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিকাল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তারা লোডশেডিংয়ের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা সত্ত্বেও কোনো সুরাহা হয়নি। মাঝে মধ্যেই সারা রাত ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ থাকে না। গত রাতেও ১০টা থেকে বিদ্যুৎ ছিল না। লেখাপড়া কীভাবে করব? বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে পড়ালেখা ঠিকমতো করতে পারছি না। লেখাপড়ার চাপ অনেক। অথচ বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে পড়ালেখা ঠিকমতো করতে পারছি না। তাই শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে এ কর্মসূচিতে গিয়েছেন। ভিসি মাসের পর মাস ঢাকায় অবস্থান করেন। কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালালেও তারা নিজেদের স্বার্থের বিষয়টি সব সময়ই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।’

সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহর নেতৃত্বে দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতে রাস্তার দুই পাশে আটকা পড়া নৈশকোচগুলোর চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য শিক্ষার্থীদের বললে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে গাড়ি ও প্রশাসন ভবনের বিভিন্ন দরজা-জানালার কাচ ভাঙচুর করেন এবং আগুন দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আউয়াল কবির জয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘লোডশেডিং নিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকবার পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন ক্যাম্পাসে ভাঙচুর করছে, আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানে।’ এ ঘটনায় প্রকৌশল অনুষদের ডিন সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবারের এ ঘটনার জন্য রিজেন্ট বোর্ডের বিশেষ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর