সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
আরও ১০ জঙ্গি চিহ্নিত

আর্টিজানে হামলার অস্ত্র আসে নেপাল থেকে

সাখাওয়াত কাওসার

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় ব্যবহূত অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রগুলো আসে নেপাল থেকে। ভারতের বিহার হয়ে এসব অস্ত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়। তবে অস্ত্রগুলো এশিয়ার আরেকটি দেশ থেকে প্রথমে নেপালে আনা হয়েছিল। অন্যদিকে আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান, নারায়ণগঞ্জে আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড নিউ জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন ভয়ঙ্কর জঙ্গি নিহত হওয়ার পর তাদের অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে ধারণা তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরেও পলাতক আছে এমন ৮ থেকে ১০ জন ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে চিহ্নিত করা গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পুরোটাই মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী সংগ্রহ করেছেন। আরও ফান্ড সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি। মনিরুল বলেন, নারায়ণগঞ্জে তামিমসহ নিহত আরও দুই জঙ্গির মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম কাজী ফজলে রাব্বী। বাবার নাম কাজী হাবিবুল্লাহ। বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ার নতুন উপশহরে। বাকি একজনের আঙুলের ছাপ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওই লাশটি মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র তাওসিফের কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাশটি কার নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করতে পারেন। প্রয়োজনে আমরা ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেব।’ তদন্তসূত্র বলছে, গত বছর সিরিয়ায় নিহত গোপালগঞ্জের সাইফুল ইসলাম সুজনের বাবা মো. হাসনাত রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে ৩৮ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়ার পরই জঙ্গিদের ফান্ড সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য পান গোয়েন্দারা। ওই টাকা মাস্টারমাইন্ড তামিমের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল তার। এর কিছুদিন আগে তিনি নিজেই ছয় লাখ টাকা তামিমের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। মোটা অঙ্কের ওই টাকাগুলো স্পেন থেকে হুন্ডির মাধ্যমে এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সিটি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, তারা তামিম চৌধুরীকে প্রায় এক বছর ধরে খুঁজছিলেন। তবে একাধিক জঙ্গি হামলায় তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে ফেব্রুয়ারিতে। এরপর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানার নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুলিশ তার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। সূত্র বলছে, জঙ্গিরা এপ্রিল থেকে গুলশানে হামলার পরিকল্পনা করে। এ জন্য তাদের আয়োজন ছিল অনেক। কে হামলা করবে, কে অস্ত্র দেবে, কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে, কে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে ছবি প্রচার করবে—এসব করতে জঙ্গিরা অনেক অর্থ খরচ করেছে। আর সেই টাকার জোগান দেন তামিম চৌধুরী। তিনি এ অর্থ বিদেশি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। হামলায় ব্যবহূত ক্ষুদ্রাস্ত্রগুলো ভারতের বিহারের মুঙ্গায় তৈরি। জঙ্গিরা ভারত থেকেই এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল। অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্রাস্ত্রগুলোর গায়ে মেড ইন ইন্ডিয়া লেখা। তবে একে-২২ অস্ত্রের গায়ে কোনো কিছু লেখা নেই। এই অস্ত্রগুলো নেপাল থেকে বাংলাদেশে ঢোকে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। আর্টিজান ও শোলাকিয়া হামলার আরেক মাস্টারমাইন্ড মারজান সম্পর্কে মনিরুল বলেন, মারজান মূলত বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে সমন্বয়ের কাজ করেন। তিনি আরবি ও ইংরেজিতে পারদর্শী, বুদ্ধমান ও চতুর। এসব কারণে দলের মধ্যে তার গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রসঙ্গত, শনিবার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার একটি বাসায় গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালায় সিটি ও পুলিশের এলআইসি শাখা। ওই অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন।

সর্বশেষ খবর