সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

নতুন বাজার খুঁজে বের করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা সেটা বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করুন। সরকারের পক্ষ থেকে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে কর্মক্ষম যুবক আছে। এখানে সস্তা শ্রম পাওয়া যায়। এই তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলে তাদের কেউ আর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। 

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা। ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় করার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ৫২টি সোনা, ৩৭টি রুপা, ২৪টি ব্রোঞ্জ ট্রফি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। সরকার এখানে ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক অগ্রগতির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যেন দ্রুত উন্নতি হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে ১০টির কাজ এগিয়ে চলছে। তার সরকার বিগত ৭ বছরে ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সুখবর হচ্ছে, এখন অনেক নতুন নতুন পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে, এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ পৃথিবীতে এখন বহু দেশ এবং মানুষের চাহিদাও দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণও একান্তভাবে প্রয়োজন। ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বিদেশে টাকা গুজে রাখতে হবে না। বিদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা আনবেন ব্যবসার জন্য সে পরিমাণ টাকা নিতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন হুন্ডি বা জঙ্গি অর্থায়নে টাকা আনা-নেওয়া করতে না পারে। ২০৪১ সালকে টার্গেট করে আমরা রোডম্যাপ তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করছি। রপ্তানি আয়ে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাটা যদি না হতো, ইউরোর দাম যদি না কমতো, আমাদের রপ্তানির টাকার অঙ্কটা আরও বেশি দেখাতে পারতাম। তারপরও রপ্তানি হচ্ছে, সেটাই বড় কথা। তিনি বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছি। খাদ্য ক্রয় করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হতো। এখন তা হয় না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসার পর সার্বিক পরিকল্পনায় ব্যবসা খাতকে এগিয়ে নিতে থাকি। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছিল। ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারত না। হাওয়া ভবনকে কমিশন দিতে হতো। কেবল স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিজেদের জন্য কাজ করেছে। কিন্তু আমরা দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি।

জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেল ১১৩টি প্রতিষ্ঠান : ২০১১-১২ ও  ২০১২-১৩ দুই অর্থ বছরেই সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি সোনা পায় ?জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে স্বর্ণপদক পেয়েছে রিফাত গার্মেন্ট, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কামাল ইয়ার্ন, সাদ সান টেক্সটাইল, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড, নোমান টেরিটাওয়েল, অ্যাপেক্স ফুডস, পপুলার জুট, আকিজ জুট, অ্যাপেক্স ট্যানারি, পিকার্ড বাংলাদেশ, এফবি ফুটওয়্যার, আল আজমী ট্রেড, প্রাণ ডেইরি, রাজধানী ইন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর, বেঙ্গল প্লাস্টিক, ফার সিরামিকস, বিআরবি কেবল, মেরিন সেফটি সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মা, গ্রাফিক্স পিপল, ইউনিভার্সেল জিনস, শাশা ডেনিমস, মনট্রিমসে এবং মীর টেলিকম। রৌপ্য পদক পেয়েছে অনন্ত অ্যাপারেলস, স্কয়ার ফ্যাশনস, বাদশা টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল, ইউনিলারেন্স টেক্সটাইল, সীমার্ক (বিডি), রেজা জুট, জনতা জুট, এসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএমএম লেদার, লালমাই ফুটওয়্যার, মনসুর জেনারেল, প্রাণ এগ্রো, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, বেঙ্গল প্লাস্টিক, সার্ভিস ইঞ্জিন এবং প্যাসিফিক জিনস। ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে অ্যাপারেল গ্যালারি, ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস, মোশারফ কম্পোজিট, তালহা ফেব্রিকস, জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস, উত্তরা জুট, সাদাত জুট, বেঙ্গল লেদার, এবিসি ফুটওয়্যার, ফুটবেড ফুটওয়্যার, এলিন ফুডস, প্রাণ ফুডস, হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, আরএফএল প্লাস্টিক এবং ইউনিনেগ্নারি পেপারস অ্যান্ড প্যাকেজিং। ২০১১-১২ অর্থবছরে স্বর্ণ পদক পেয়েছে রিফাত গার্মেন্ট, স্কয়ার ফ্যাশনস, স্কয়ার টেক্সটাইলস, নোমান উইভিং, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস, অ্যাপেক্স ফুডস, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, আকিজ জুট, অ্যাপেক্স ট্যানারি, পিকার্ড বাংলাদেশ, এফবি ফুটওয়্যার, এগ্রি কনসার্ন, প্রাণ এক্সপোর্টস, রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর, বেঙ্গল প্লাস্টিক, ফার সিরামিকস, ইউনিগ্লোরি সাইকেল, তানভীর পলিমার, বেক্সিমকো ফার্মা, সার্ভিস ইঞ্জিন, ইউনিভার্সেল জিনস, শাশা ডেনিমস এবং মনট্রিমস। রৌপ্যপদক পেয়েছে অনন্ত অ্যাপারেলস, জিএমএস কম্পোজিট, মোশারফ কম্পোজিট, এনভয় টেক্সটাইল, সীমার্ক (বিডি), এফআর জুট, জনতা জুট, এসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএমএম লেদার, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ এগ্রো, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, এভারব্রাইট প্লাস্টিক, ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল, আল-হাবিব এন্টারপ্রাইজ, গ্রাফিক পিপল এবং জিনস-২০০০। ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে সিনহা ইন্ডাস্ট্রিজ, ফোর এইচ ফ্যাশনস, ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, কুলিয়ারচর সি ফুডস, রেজা জুট, করিম জুট, আল-আজমী ট্রেড এবং প্রাণ ফুডস।

সর্বশেষ খবর