মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জগন্নাথে ফের ছাত্রলীগের হামলা

সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর, লুটপাট

জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথে ফের ছাত্রলীগের হামলা

আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আবাসিক সংকট নিরসনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা মাসব্যাপী চলমান আন্দোলনের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এতে নারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন । গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র মহাসমাবেশ করবেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা একযোগে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস কয়েকবার প্রদক্ষিণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থা নেন। ১০টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে আন্দোলনের চাপ সৃষ্টি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজি না হয়ে ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলায় অবস্থান নেন। ওই সময় ছাত্রলীগ সভাপতি এফ এম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম কয়েকজন অনুগত কর্মী নিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ছত্রভঙ্গ করতে যান। তারা শিক্ষার্থীদের মাইক কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে স্লোগান দিতে জোর করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের এ আহ্বানে সাড়া না দিলে আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে টেনে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভয়ে অবস্থান ত্যাগ করে শান্ত চত্বরের সামনে যেতে চাইলে ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে চার নারীসহ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে ১০-১২ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এতে ছাত্রলীগ প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এদিকে রবিবার সাংবাদিক সমিতির জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদকর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের ইতিবাচক খবর বর্জন করার জেরে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি কয়েকজন অনলাইন সাংবাদিকের সঙ্গে আঁতাত করে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় সমিতিতে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি খুলে ফেলে হামলাকারীরা। তারা কার্যালয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করেন বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা কয়েকজন অনলাইন সাংবাদিক নিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন। তারা কার্যালয়ের দুটি ল্যাপটপ ও একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং অ্যানড্রয়েড মোবাইলসহ অন্তত ২ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করেন বলে জানা যায়। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিক কার্যালয়ে এসে তালা দিয়ে সিলগালা করে দেয়। তারা তালা লাগিয়ে বের হয়ে গেলে দ্বিতীয় দফা হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ সেখানে যায়। সেখানে তারা কাউকে না পেয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙে আবার ভাঙচুর করেন। প্রশাসন ফের তালা দিয়ে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। এ সময় সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলা মেইলের বহিরাগত সাংবাদিক ইমরান, জাগো নিউজের সাংবাদিক সুব্রত মণ্ডল, পরিবর্তন ডটকমের সোহাগ, সংবাদ পত্রিকার শাহীন, ব্রেকিং নিউজের রাকিবসহ বেশ কয়েকজন অনলাইন সাংবাদিক নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটে সহযোগিতা করা হয় বলে জানা যায়। এ ছাড়াও কতিপয় অনলাইন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সিল ও প্যাড ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাদের অপকর্মের খবরও ছাপানো হয়।

কর্মসূচি : ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রমহাসমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল ৪টায় শাহবাগ মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় সিলগালা থাকবে।’

জবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জমিতে আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-জবি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে অযৌক্তিক ও অবৈধ আখ্যায়িত করে, তা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। কারাগারের জমিতে জাদুঘর, শিশু পার্ক ও কনভেনশন সেন্টারসহ প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত স্থাপনা দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে জবি ভিসি অধ্যাপক মীজানুর রহমানকে অপসারণ চেয়ে বলেছেন, ভিসি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হল দাবির নামে জ্বালাও-পোড়াও করে পুরান ঢাকায় অস্থিরতা তৈরি করেছেন। গতকাল সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ মিলনায়তনে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব। আরও বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সভাপতি আবদুস সালাম। এতে সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক আলাউদ্দিন মালিক, ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফেজ হাজী হারুন, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সারওয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, পুরান ঢাকা ৪১০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক শহর। সারা দেশের সব ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎস পুরান ঢাকা। সেই পুরান ঢাকায় ২২৮ বছর আগের তৈরি কারাগার এখন বিভিন্ন সমস্যার কারণ। খেলার মাঠ, পার্ক, বিনোদন আর সবুজ অরণ্যেও নিঃশ্বাস থেকে বঞ্চিত পুরান ঢাকাবাসী। এমন প্রেক্ষাপটে কারাগারে পরিত্যক্ত জমিতে বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম, চার নেতার স্মরণে জাদুঘর, শিশু পার্ক, সুইমিং পুল, কনভেনশন সেন্টার, বহুতল কার পাকিং, প্রশস্ত রাস্তা পুরান ঢাকাকে নগরে রূপান্তর করা যেতে পারে। আবু মোতালেব আরও বলেন, পুরান ঢাকাবাসী রক্ত দেবে, তবুও কারাগারের জমি দেবে না। জবি শিক্ষার্থীদের চলমান এই আন্দোলন আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বন্ধ না হলে, ১ সেপ্টেম্বরের বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে প্রতিবাদ সভা করা হবে। এই সভা থেকে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে লাগাতার ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সর্বশেষ খবর