মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহন

নিয়ন্ত্রণে বাদ সাধছে চালক-শ্রমিকরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অতিরিক্ত ওজন নিয়েই চলছে পণ্য বোঝাই গাড়ি। এতে করে নষ্ট হওয়ার পথে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা দেশের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত এ মহাসড়কটি। সম্প্রতি অতিরিক্ত ওজন পরিবহন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে কয়েকটি গাড়িকে জরিমানা করে স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এতে বাদ সাধে পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহনকালে জরিমানা করার সময় পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ওজন নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির প্রকারভেদে ১৫ থেকে ৩৩ টন ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন পরিবহন চালকরা এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে ৫০ থেকে ৮০ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করে। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার পণ্যবাহী গাড়ি এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহনের ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মহাসড়কের স্থায়িত্ব কমে যাবে। মহাসড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ফলে নষ্ট হয়ে যাবে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা মহাসড়কটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকৌশলী বলেন, সাধারণত একটি সড়ক মেরামত করার পরবর্তী পাঁচ বছর পর এর সংস্কার করতে হয়। কিন্তু যখন ওই সড়ক দিয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহন করা হয় তখন দু-এক বছরের মধ্যে রাস্তা ড্যামেজ হয়ে যাবে। তখন দুই বছরের মধ্যেই ওই সড়কের সংস্কারকাজ করতে হয়। তাই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। স্কেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাগনাম রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হোসেন জনি বলেন, ‘মঙ্গলবারের ঘটনার পর শুক্রবার সচিব, ডিসিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিবহন মালিকরা। এ সময় তারা কিছু দাবি-দাওয়া দিয়েছেন। তাদের দাবি সরকারের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।’  সড়ক সূত্র জানায়, বিগত সময়ে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করা গাড়িগুলোকে ফেরত পাঠানো অথবা অতিরিক্ত পণ্য কমিয়ে আনার বিধান ছিল। কিন্তু চালকরা কখনো সেই নিয়ম মানত না। গত ১৮ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই গাড়ি ফেরত না পাঠিয়ে জরিমানা করা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে চারটি স্লাবে দুই হাজার, চার হাজার, ছয় হাজার ও ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে প্রথমদিকে সব ধরনের স্লাবে দুই হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। মঙ্গলবার রাতে অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে কয়েকটি গাড়িকে থামিয়ে জরিমানা করে স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র‌্যাগনাম রিসোর্স লি.। এ সময় শতাধিক চালক জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ভাঙচুর শুরু করে। হামলা চালায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর। কর্মকর্তারা প্রাণভয়ে আরেক স্টেশনের ভিতরে আশ্রয় নেয়। বিক্ষুব্ধরা স্টেশনটির দরজা বন্ধ করে ডিজেল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সর্বশেষ খবর