মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
নগরবাসীর নাভিশ্বাস

যানজটে অচল ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ গতকাল অনেককেই বাসে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পাড়ি দিতে হয়েছে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে। কার্যত দুপুর থেকে টানা যানজটে পুরো ঢাকা হয়ে পড়েছিল অচল।

দুপুর ১২ থেকে বিকাল ৫টা, এমনকি সন্ধ্যা অবধি পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মৌচাক, মগবাজার, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, মালিবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মানিক মিয়া এভিনিউ, মিরপুরসহ পুরো ঢাকাই ছিল স্থবির। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকায় আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ। এ ছাড়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলায়ও প্রভাব পড়ে রাজপথে। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় পুরো ঢাকায়। বিশেষ করে দুপুর ১২ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মানুষকে রাস্তায় আটকে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে কেউ কেউ হেঁটেও গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন স্থানে জরুরি ওষুধের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগী পরিবহনকারী বিভিন্ন ধরনের গাড়িকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে রাস্তায়। কোনো কোনো স্থানে রোগীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পায়ে হেঁটে কিংবা পাজাকোলা করে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। বিকাল ৪টায় সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার ভিআইপি সড়কটিতে মহাখালী থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত সারি সারি গাড়ি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। এমন চিত্র শুধু বিমানবন্দর সড়কেই নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কেই দেখা গেছে।

যানজট নিত্যদিন : ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, গত শনিবার থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট চলছে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা— প্রায় পুরো সময়ই রাজধানীর সড়কে থাকছে তীব্র যানজট। এমনকি কোনো কোনো সড়কে গভীর রাতেও যানজটে আটকে থাকছেন নগরবাসী। যানজটের এ অবস্থায় বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাথগুলো বেদখল থাকায় স্বস্তিতে হাঁটতেও পারেন না নগরবাসী। এ ছাড়া যত্রতত্র কার পার্কিং, পাবলিক পরিবহনের সংকট, ট্রাফিক আইন না মানা, রাস্তায় অপ্রতুলতায় রাজধানীবাসীর নিত্য সঙ্গীতে রূপ নিয়েছে যানজট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অযান্ত্রিক যানের (রিকশা, ভ্যান) অবাধ বিচরণ, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাথ দখল, পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শহরের ভিতর দিয়ে ট্রেন চলাচল, চালক ও পথচারীদের নিয়ম না মানার সংস্কৃতি। আরও আছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে ঢাকার যানজট পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসহ্য যানজটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা। সূত্র মতে, দেড় কোটি মানুষের ‘মেগাসিটি’ ঢাকায় জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে যানবাহন, বাড়ছে না শুধু রাস্তা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি শহরের রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় এই পরিমাণ মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ। এর একটি বড় অংশ আবার পার্কিং ও হকারদের দখলে। ট্রাফিক বিভাগের হিসাবে, রাজধানীতে যে পরিমাণ রাস্তা আছে তাতে তিন লাখের মতো গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। অথচ ২০০৯ পর্যন্ত রাজধানীতে মোটরযানের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের কিছু বেশি। এর পাশাপাশি ঢাকা মহানগরে ৭৯ হাজার লাইসেন্সধারী রিকশার বিপরীতে প্রায় ১০ লাখ রিকশা চলছে। যা যানজটের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক গুণ।

সর্বশেষ খবর