মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকা সিটি মেয়রদের ‘উপকর’ আদায়ের প্রস্তাব নাকচ

মানিক মুনতাসির

ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের উপকর আদায়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, নতুন বাজেটের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় জনগণের ওপর এমনিতেই করের চাপ রয়েছে। এর সঙ্গে এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো করের বোঝা চাপানো ঠিক হবে না। উল্লেখ্য, নিজেদের আয় বাড়িয়ে ঘাটতি মেটাতে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯-এর ৮২ ধারায় ক্ষমতাবলে উপকর আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন দুই সিটির মেয়র। এদিকে ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয় কীভাবে বাড়ানো যায়— সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। গত সপ্তাহে তার দফতর থেকে পাঠানো এই প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, সিটি করপোরেশন দুটি আয় বাড়াতে কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং কীভাবে তাদের আয় নিশ্চিত করবে— সে ব্যাপারে মৌলিক কার্যপত্র প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি উদ্যোগ নিতে পারে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে পার্শ্ববর্তী দেশের আইন পর্যালোচনা করে প্রাথমিক কার্যপত্র তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ অভিমত চিঠি আকারে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে চিঠির অনুলিপি দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সের পাশাপাশি আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ উপকর আরোপের প্রস্তাব দেন। বলা হয়েছিল, এ উপকর নির্ধারিত করের সঙ্গে এনবিআর আদায় করে সিটি করপোরেশনের কোডে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। পাশাপাশি আমদানি পণ্যের ওপর আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর আদায়ে হিস্যা দাবি করে সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৮২ ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশন সরকারের অনুমোদনক্রমে চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত সব অথবা যে কোনো কর, উপকর, রেট, টোল ও ফি ইত্যাদি আরোপ করতে পারবে। এর আগে দক্ষিণ সিটির মেয়য় সাঈদ খোকন গত ৩০ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চরম আর্থিক দৈন্যতা বিরাজ করছে। ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিভক্ত হওয়ার ৬৫ ভাগ রাজস্ব আয় চলে গেছে উত্তর সিটির হাতে। আর বাকি ৩৫ ভাগ রাজস্ব আয় রয়েছে দক্ষিণ সিটির হাতে। ফলে সামান্য এই রাজস্ব আয় দিয়ে সিটি করপোরেশনের বিশাল কর্ম ব্যয় নির্বাহ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের যথাযথ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে সময় এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, সব সময় রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এজন্য প্রয়োজনে আয় বাড়াতে হবে। আর ঢাকা সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী উপকর আদায় করতে পারে করপোরেশন। সেটা হলে আমাদের আয় অনেক বাড়বে এবং এর মাধ্যমে আর্থিক দৈন্যতা কেটে যাবে। জানা গেছে, বিভক্তির কয়েক বছরের মাথায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকায়। বিপুল পরিমাণ এই আর্থিক সংকট কাটাতে অর্থমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকেও উপকর আদায়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর