বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
একনেকে ৫ প্রকল্প অনুমোদন

মিরসরাইয়ে হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআরটিসির জন্য নতুন ১ হাজার ১০০ বাস-ট্রাক কেনাসহ মোট  দুই হাজার ৮০৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মোট পাঁচ প্রকল্পে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৯৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন  দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় ৫টি প্রকল্প অনুমোদন  দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৯৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। বিআরটিসির জন্য বাস ও ট্রাক কেনার দুটি প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিআরটিসির যেসব বাস ও ট্রাক নষ্ট হয়ে  গেছে, সেগুলো দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য একটি কমিটি গঠন ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের জন্য কাভার্ড ভ্যান হিসেবে কয়েকটি ট্রাক আমদানি করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিআরটিসির জন্য বাস ও ট্রাক কেনার দুটি প্রকল্প অনুমোদন  পেয়েছে সভায়। এর মধ্যে বিআরটিসির জন্য ৬০০টি দ্বিতল, একতলা এসি ও নন-এসি বাস সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮০  কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। 

২০১৮ সলের জুনের মধ্যে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য বাসগুলো ঢাকার রাস্তায় চলাচল করবে। এ ছাড়া একনেক সভায় চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল হতে উপকূলীয় বাঁধের ভাঙনরোধ করে প্রকল্প এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাকে রক্ষা করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো এবং অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান রাখা, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে জনগণের জানমাল, সম্পদ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, ১৭ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ১৮ দশমিক ৪৮৮ কিলোমিটার মোটরাবল পেভমেন্ট নির্মাণ, ৩০ কিলোমিটার পুনঃখনন এবং ৬১৬ মিটার ক্লোজার নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে জামালপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জামালপুর নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। পিবিআই-এর কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তদন্ত সহায়ক যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ‘ব্রিটিশ কোম্পানি রেলপথ নির্মাণে অনেক দক্ষ। তাদের রেলপথ নির্মাণের কাজের মানও অনেক ভালো। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কল্যাণে সরাসরি রেলপথ যাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। এরপরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার। প্রথম ধাপে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী জেলার পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত  রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের প্রিলিমিনারি  ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (পিডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। পিডিপিপি অনুসারে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। চীন সরকারের নমনীয় ঋণ অথবা যে কোনো উন্নয়ন সহযোগী দেশের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর