বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যত বাধা আসুক বিচার চলবে

শোক দিবসের সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যত বাধা আসুক বিচার চলবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণসভায় গতকাল বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ও জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনিরা বিবিসিতে সাক্ষাত্কারে গর্ব করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিল, আমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছি। কে আমাদের বিচার করবে? আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাংলার মাটিতে বিচার করেছি। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। একাত্তরের স্বজনহারানোর মনে শান্তি ও স্বস্তি দিতে আমরা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায়ও কার্যকর করছি। যতই বাধা-বিপত্তি বা হুমকি আসুক, যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি আলবদর-রাজাকারদের ক্রীড়নক হয়ে থাকতে চাই না। গতকাল বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হলো।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর জাতির  পিতার নাম নিষিদ্ধ এবং ইতিহাস বিকৃতির উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতেই দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নাম ও তার ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। একটি প্রজন্ম যদি ক্রমাগতভাবে বিকৃত ইতিহাস শুনতে থাকে, তবে তাদের চরিত্রটাও বিকৃত হয়ে যায়। আজকের যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, তা সেই বিকৃত ইতিহাস থেকেই সৃষ্টি। দেশ ও জাতির জন্য যে কোনো ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যে কোনো মহত্ অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগের প্রয়োজন। তাই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের কল্যাণ ও উন্নত জীবন দিতে আমিও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রকাশনী ‘মাতৃভূমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল এবং তখনকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সালের পর দেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। প্রতি রাতে ছিল কারফিউ। অনেকে বলে জিয়া নাকি (জিয়াউর রহমান) গণতন্ত্র দিয়েছে। গণতন্ত্র নয়, জিয়া দিয়েছিল কারফিউ গণতন্ত্র। তখন (জিয়াউর রহমানের আমলে) স্বাধীনভাবে চলার কোনো সুযোগ ছিল না, কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আমলে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত ছিল, ২২ হাজার মামলা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করে দিলেন। গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এর বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। বিদেশিরা তদন্ত করতে চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার কয়েক বছর পর যু্ক্তরাজ্যে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবিতে জনমত গঠনের চেষ্টা করলাম। সে দেশের বেশ কয়েকজন এমপিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা সবাই মিলে স্যার টমাস উইলিয়ামসকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাকে ভিসা দেননি। কেন তাকে (স্যার টমাস উইলিয়াম) বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেওয়া হয়নি? জিয়া চাননি এ ঘটনার তদন্ত হোক। কারণ তদন্ত হলে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়ে যেত। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে তিনি জড়িত ছিলেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধুর মহান আত্মত্যাগ ও আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো করে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন, আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগে ছাত্রলীগই হলো অগ্রগামী নাম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এই ছাত্রলীগ। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ছাত্রলীগের যে বিশাল ভূমিকা ও ইতিহাস রয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার মতো মানুষ হতে হবে। শিগগিরই বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে এই আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, অনেক কষ্ট করে তার ডায়েরি জোগাড় করতে হয়েছে। তোমরা এটা পড়বে। এতে অনেক অজানা অধ্যায় থাকবে।’ বাংলাদেশে আসার আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মাটিতে ফিরে আসার আগেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বাংলার মাটিতে এই বিচার করব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনব। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আবার জনগণকে জানাব। আমরা সে বিচার করেছি। যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই চেতনায় যেন দেশ পরিচালনা হয়, সেটাই করব। আমরা তা-ই করছি।

তিনি বলেন, বাবা মা ভাই সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব রিক্ত আমি এদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলাম। দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম, আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সংগঠনের ভালোবাসা সহযোগিতা পেয়েছিলাম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও কারাজীবনের সময় তার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তখন নেপথ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপের পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন আমার মা। নিজের জন্য জীবনে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে কিছু চাননি। একসঙ্গে দুই বছর কখনো আমরা বাবার স্নেহ পাইনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর