শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ এগিয়ে আসেনি

——— সাদেকা হালিম

স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ এগিয়ে আসেনি

নারীর প্রতি সহিংসতা বর্তমানে একটি বিশ্ব সমস্যা। পৃথিবীর বহু দেশে নারী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশে নারীরা আগের চেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সমাজে নারীর বিচরণ ক্ষেত্র বেড়েছে। তারা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন, কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে একজন নারীর যে সমান সুযোগ ও সম্মান পাওয়ার কথা তা এখনো নারীকে দেওয়া হচ্ছে না। আর সম্প্রতি উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থী রিশা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও আমনবিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, মেয়েটিকে হত্যার অনেক দিন আগে থেকেই গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন আসামি ওবায়েদ তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এজন্য রিশার ব্যবহূত মোবাইল ফোন সিমও কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছিল। মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সাধারণ পরিবার হিসেবে তার মা-বাবার পক্ষে যতটুকু করার সাধ্য ছিল তারা তা করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রিশাকে বাঁচাতে বা তাকে সাহায্য করতে তার স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ এগিয়ে আসেননি। স্কুলের কোনো শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতেও দেখা যায়নি। অথচ রিশা যখন মারাত্মক জখম নিয়ে তার স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে তখন শিক্ষকদের পরিবর্তে স্কুলের শিক্ষার্থীরাই তাকে সাহায্য করতে দৌড়ে এসেছিল। রাজধানীর বুকে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠিত স্কুল কর্তৃপক্ষের তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীর বিপদে এগিয়ে না আসার ঘটনাটি দুঃখজনক ও লজ্জার। এজন্য স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সাদেকা হালিম বলেন, এখন যদি উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা না হয় তবে ভবিষ্যতে অন্য স্কুলগুলোও একই ভুল করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এ কারণে একের পর এক নারী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সাধারণ মানুষ ওবায়েকে ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ধরতে পারেনি। অথচ তারা ঠিকই বড় বড় জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত নিরাপদ স্থানে তনুকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়। আমি মনে করি এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিশ্চিত করা না গেলে তনু, মিতু, ইয়াসমিন ও রিশাদের একের পর এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হবে। তার মতে, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না। আমাদের বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডে রিশাকে যে চিকিৎসকরা দেখেছেন তাদেরও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সত্য হলে অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর