শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারী-কিশোরী কোথাও নিরাপদ নেই

—— সালমা আলী

নারী-কিশোরী কোথাও নিরাপদ নেই

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশার হত্যাকাণ্ডে আইনি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ)। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা ও তার বাইরে দেশের নারী ও কিশোরীরা কোথাও এখন নিরাপদে নেই। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটে সব স্থানে তাদের উত্ত্যক্ততার শিকার হতে হচ্ছে। আর আমাদের মেয়েরা যে কোথাও নিরাপদে নেই সম্প্রতি তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে রিশার হত্যাকাণ্ড। সালমা আলীর মতে, আমাদের অভিভাবককে সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। রিশার অভিভাবকরা হয়তো তাদের সন্তানের জীবনে এমন করুণ পরিণতি ঘটতে পারে এই কথা কখনো ভাবতে পারেননি। এ জন্য অভিভাবকদের তাদের কন্যা সন্তানদের কেউ উত্ত্যক্ত করছে কিনা এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কথা বলতে হবে। এই আইনজীবী আরও মনে করেন যে, রিশার অভিযুক্ত হত্যাকারী ওবায়দুল মানসিকভাবে স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, টিভির ফুটেজ দেখে লক্ষ্য করেছি যে, ওবায়দুলকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখনো তার চেহারায় ভয় বা অনুতপ্তভাব ছিল না। সে যথেষ্ট স্বাভাবিক ও হাসিখুশি ছিল। অথচ তরুণটি যে মারাত্মক অপরাধ করেছে এই সম্পর্কে বা এর পরিণাম ও ভয়াবহতা সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। ধরে নিতেই পারি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা যে অনুচিত এ সম্পর্কিত শিক্ষা ওবায়দুল তার পারিবারের কাছ থেকে পায়নি। আমি মনে করি রিশার বিষয়ে যেমন তার স্কুল কর্তৃপক্ষ অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। একইভাবে তার হত্যাকারী ওবায়দুলের বিষয়ে খুব একটা খোঁজখবর নেয়নি যে দর্জি দোকানে কাজ করত তার মালিক। সালমা আলী বলেন, আমরা রিশার ঘটনাটি তদন্ত করছি। সেখানে রিশা তার অভিভাবককে ওবায়দুলের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি জানিয়েছিল কিনা তা দেখব। এ ছাড়া মেয়েটির অভিভাবকদের চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়েও অভিযোগ করেছেন। আমরা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখব। তিনি বলেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে অভিযোগ কমিটি গঠন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি এখনো আমলে নিচ্ছে না। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এখন অপরাধীরা তাদের অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নয়। যেমন হয়েছে ওবায়দুলের ক্ষেত্রে। এর পরিণতি হিসেবে তাকে যে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে তা হয়তো জানেনই না। জানলে ঘটনাটি ঘটানোর আগে আরেকবার ভাবত। তবে এই ঘটনার দায় সার্বিকভাবে সবার। আমরা যদি অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারি তবে এভাবেই একের পর এক রিশাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকবে। এরই মধ্যে তনু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ জন্য রিশা হত্যাকাণ্ডে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি দেখতে চাই। আমরা জানি স্পর্শকাতর নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলোর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনিটরিং করে। তবে তাদের একার পক্ষে এ কাজ করা সহজ নয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এই মামলাগুলোতে যত দ্রুত তদন্ত করে বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে সমাজ থেকে ততই এই ঘটনাগুলো হ্রাস পাবে।

সর্বশেষ খবর