শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত

১৪ বছরেও শেষ হচ্ছে না ব্যাংকার দেলোয়ারের যন্ত্রণা

মানিক মুনতাসির

১৪ বছরেও শেষ হচ্ছে না ব্যাংকার দেলোয়ারের যন্ত্রণা

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০ বছর আগে ১২ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন ১৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু আজও তার যন্ত্রণার শেষ নেই, চাকরিটা তিনি আর ফিরে পেলেন না। এমনকি বিধি অনুযায়ী তিনি যে ‘খোরাকি ভাতা’ পাওয়ার কথা, ২০ বছরেও তা পেলেন না। এই ভাতার জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। খন্দকার দেলোয়ার বলেন, অর্থাভাবে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। কোনো কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হলেও নিয়ম অনুযায়ী তিনি খোরাকি ভাতা পাবেন।’ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বিষয়ে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সোনালী ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা চেক জালিয়াতি বা অর্থ আত্মসাৎ কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলায় গ্রেফতার হলে কিংবা থানা বা জেলহাজতে থাকলেও তাকে বা তার পরিবারকে ‘খোরাকি ভাতা’ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু খন্দকার দেলোয়ারের ক্ষেত্রে তা প্রতিপালিত হয়নি। বরং তাকে দেখানো হয়েছে ‘পলাতক’। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে সোনালী ব্যাংকের গোড়ান শাখায় প্রায় প্রতিদিনই হাজিরা দিলেও তাকে খাতায় সই করতে দেওয়া হয় না। শাখা ব্যবস্থাপককে অনেকবার অনুরোধ করেছেন খোরাকি ভাতা প্রদানের জন্য। এজন্য একাধিকবার লিখিত আবেদনও করেছেন। সেই আবেদনের অনুলিপি অর্থমন্ত্রী, সোনালী ব্যাংকের এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও জমা দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু ব্যাংকটির গোড়ান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকরা ও বর্তমান ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দীন আহমেদ তাকে খোরাকি ভাতা না দিয়ে উল্টো চোর, জালিয়াত আখ্যা দিয়ে শাখার চৌহদ্দিতে ঢুকতে দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী খন্দকার দেলোয়ার। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এসে এই প্রতিবেদকের কাছে নিজের এমন করুণ কাহিনী তুলে ধরেন তিনি। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংক গোড়ান শাখায় ১২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। যার চেক নম্বর ৫৬৩৮১৬২/-এসবিএ ৫১৫৭, ৫৬৩৮১৬৪ এসবিএ ৫১৫৭, ৫৬৩৮১৬৫/এসবিএ ৫১৫৭, ৫৬৩৮১৬৬/এসবিএ ৫১৫৭, ৫৬৩৮১৬৩/এসবিএ ৫১৫৭। ১৯৯৭ সালের ৫, ১০, ২২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ৮ জুলাই এসব চেকের বিপরীতে মোট ১২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেন সেই সময়ের শাখা ব্যবস্থাপক আবু তাহের ও চেক পাসিং কর্মকর্তা সামশুদ্দিন (সিনিয়র অফিসার)। ওই শাখার গ্রাহক এ টি এম জাকিউদ্দিনের স্বাক্ষর জাল করে গোড়ান শাখা, সোনালী ব্যাংক সঞ্চয় হিসাব নম্বর ৫১৫৭ থেকে উত্তোলন করে আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়। পরে অবশ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষণিকভাবে হিসাব নম্বর জব্দ করে টাকা ফিরিয়ে আনে। কিন্তু এ ঘটনায় গোড়ান শাখার তৎকালীন কর্মকর্তা খন্দকার দেলোয়ার হোসেনসহ পাঁচজনকে আসামি করে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে সোনালী ব্যাংক। ওই মামলায় উত্তরা ব্যাংক সিদ্ধেশ্বরী শাখা, পূবালী ব্যাংক রামপুরা শাখা, জনতা ব্যাংক হাজীপাড়া শাখা ও সঞ্চয়পত্র হিসাব সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিসের তৎকালীন ব্যবস্থাপককে আসামি করা হয়। খন্দকার দেলোয়ার ছাড়া এদের প্রত্যেকেই স্বপদে বহাল রয়েছেন। তারা নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি-বদলিসহ ব্যাংকের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। খন্দকার দেলোয়ার বলেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি জানান, ২০০২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মানি মোকদ্দমা নম্বর ৫/২০০ যুগ্ম জেলা অর্থঋণ আদালত নম্বর-১ থেকে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাসও পান। আরেক ফৌজদারি বিভাগীয় মামলা স্পেশাল ৪৬/০৪ থেকেও খালাস পেয়েছেন ২৭ মে, ২০০৯ সালে। এরপর ১৪ ও ৭ বছর কেটে গেলেও তিনি তার চাকরি ফিরে পাননি। এমনকি তাকে খোরাকি ভাতা পর্যন্ত সরবরাহ করছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের কাছে খোরাকি ভাতা পেতে বার বার শাখা কার্যালয়ে যোগাযোগ করায় গোড়ান শাখার ব্যবস্থাপক তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। এজন্য তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক গোড়ান শাখার ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এ নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। মামলা থেকে দেলোয়ারকে খালাস দেওয়া হলেও আপিল করা হয়েছে। ফলে এ জটিলতার অবসান ঘটাতে হলে তাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর