শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফের সক্রিয় ফল জালিয়াত চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ‘প্রশ্নফাঁস ও ফল জালিয়াত’ চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফল পরিবর্তনের কথা বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এইচএসসির ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেও সংঘবদ্ধ একটি চক্র মাঠে নেমেছে। জিপিএ-৫সহ ভালো ফলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে চক্রটি। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে চক্রটি।

নিয়মানুযায়ী  নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। যদি চক্রটির ব্যবহার করা সিমগুলো নিবন্ধন করা হয়েই থাকে, তবে কেন তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না— এমন প্রশ্ন অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট মহলের। মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব চক্রের কোনো কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করলেও অপতত্পরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ‘অ্যানি বোর্ড কোয়েশ্চন’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে বৃহস্পতিবার একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। ০১৭৫০৬০৫৯৭০ মোবাইল নম্বর দিয়ে এ চক্রটি উল্লেখ করে, ‘দুই বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেব’। এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে এই প্রতারককে ফোন করলে বলেন, ‘যারা ফেল করেছে তাদের দুই বিষয়ে এ গ্রেড করে দেব এজন্য লাগবে মোট ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া যারা পাস করেছে কিন্তু ফল ভালো নয় তাদের ক্ষেত্রে দুই বিষয়ের জন্য দিতে হবে মোট ৮ হাজার টাকা।’ আরও বলেন, ‘রেজাল্ট পরিবর্তনের আগে সব টাকা দিতে হবে না। সাবজেক্টপ্রতি মাত্র ১০০ টাকা বিকাশ করে দিতে হবে।’ কয়েক বছর ধরে সফলতার সঙ্গেই তিনি জেএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে রেজাল্ট পরিবর্তন করে দিয়ে আসছেন বলে দাবি করেন। তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন। নামও বলতে রাজি হননি। মেডিকেলে ভর্তিসহ যাবতীয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তিনি পরীক্ষার আগেই টাকার বিনিময়ে ফাঁস করে দেন বলেও জানান। ‘পিএসসি টু মাস্টার্স, মেডিকেল অ্যান্ড নিব...’ নামের ওপেন গ্রুপে দেখা গেছে ফল পরিবর্তন, প্রশ্নফাঁসের কথা বলে অনেক সংঘবদ্ধ চক্রই সক্রিয় এখানে। ‘রকি ভাই’ নামের আইডি থেকে গ্রুপটিতে দেওয়া একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে— ‘যে কোনো পরীক্ষার শতভাগ কমন প্রশ্ন দেওয়া হবে’। এস কে আবদুল আলম নামের আইডি থেকে পোস্টে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মেডিকেলের প্রশ্নও ফাঁস করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে দেওয়া এস কে আবদুল আলমের ০১৭৭১৫৫৬৩২০ মোবাইল নম্বরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে কল করলে তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে হলে পরীক্ষায় অ্যাটেন্ড করতে হবে। চান্স পাওয়ার পর নির্ধারিত ৪ লাখ টাকা দিতে হবে। আগে কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে ভর্তিচ্ছুর অভিভাবককে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হবে।’ অভিযোগ রয়েছে, মেডিকেলে ভর্তির জন্য হন্যে হয়ে থাকা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্প জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ফেসবুকে তিনি দাবি করেছেন, ‘শতভাগ কমনসহ রিয়েল কাজ করি।’ প্রাথমিক সমাপনী থেকে শুরু করে শিক্ষক নিবন্ধনসহ চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নও তিনি টাকার বিনিময়ে ফাঁস করে দেন বলে দাবি করেন।

সাদমান পি কে নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বরাবরই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফল টাকার বিনিময়ে পরিবর্তন করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ০১৬৩১৪৬৬৩৬৫ মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতিবেদক কয়েক দফায় এই নম্বরে কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পরীক্ষার ফল ভালো করে দেওয়ার আশ্বাসে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদক রেজাল্ট পরিবর্তন বা প্রশ্নফাঁসের কথা বলে প্রতারণার কারণ জানতে চাইলে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা অসাধু ব্যক্তিরা দাবি করেন, ‘আমরা কোনো প্রতারণা করি না। টাকা নিই কাজ করি।’ বরাবরই রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হলেও বিটিআরসি তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর