রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পাচার হওয়ার ১২ বছর পর ফিরল বেল্লাল

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

পাচার হওয়ার ১২ বছর পর ফিরল বেল্লাল

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বাইপাস এলাকার বেল্লাল হোসেনকে পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির পাশে খেলা করার সময় নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের সদস্যরা অপহরণ করে। এরপর তারা ভারত সীমান্তের পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয় এই শিশুটিকে। ভারতের আসামের গৌহাটিতে পাহাড়ি এলাকায় এক মদের কারখানায় দীর্ঘ এক যুগ বন্দী করে কাজ করানো হয়। কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে ফেনীর পরশুরাম সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে ৩০০ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে আসে শিশু থেকে বেড়ে ওঠা ১৭ বছরের ওই কিশোর। বেল্লাল হোসেন এখন শুধু তার নাম বেল্লাল হোসেন, বাড়ি ঝালকাঠির বাইপাস, বাবা জসিম উদ্দিন, মায়ের নাম সেলিনা এতটুকুই বলতে পারে। অন্য কিছুই মনে নেই তার। সেই সূত্র ধরেই ফেনী থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শুক্রবার রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের বাইপাস এলাকায় আসে বেল্লাল। স্থানীয় খসরু নামে এক সবজি বিক্রেতা তাকে আশ্রয় দিয়ে বাবা-মাকে খোঁজার চেষ্টা করেন। এখন থানা পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে তার পরিবারকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। বেল্লাল বাংলা ভাষা বুঝলেও কথা বলতে পারে না বাংলায়। শুধু হিন্দিতেই কথা বলে। বেল্লাল জানায়, তার বাবা খুব সকালে বাড়ি থেকে কাজে বের হতেন। ফিরতেন গভীর রাতে। তবে কী কাজ করতেন তা মনে নেই। কাঁচা রাস্তার পাশে টিনের ঘরে মা-ই সব সময় তাকে আগলে রাখতেন। একমাত্র সন্তান হিসেবে রাখতেন চোখে চোখে। এরপর সবার অজান্তে শিশু পাচারকারীর কবলে পড়ে হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে ১২টি বছর। এই সময়ে বহু অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তবুও মাটির টান, বাবা-মায়ের টান ভুলতে পারেনি একটু সময়ের জন্যও। সেই এক যুগ ধরেই তার লড়াই আর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল মায়ের কাছে ফিরে আসার। এরপর ভারতের আসামের গৌহাটি পাহাড়ের মদের কারখানার দারোয়ানের কাছে কাকুতি-মিনতি করে বের হয় বেল্লাল। তারপর বাংলাদেশের ফেনী থেকে স্থানীয় রানা নামে এক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় ট্রেনে লক্ষ্মীপুর আসে। সেখান থেকে লঞ্চযোগে ভোলা ও বরিশাল হয়ে রাজাপুর বাইপাস এলাকায়। তবে এর অধিকাংশ সময়ই ওকে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয়েছে। বেল্লাল বলে, ‘আমি অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে এসেছি শুধু বাবা-মাকে ফিরে পেতে। আমি বাবা-মাকে ছাড়া আর কারও কাছে কিছুই চাই না।’ রাজাপুরের সাংবাদিকরা জানান, ‘বেল্লালের ঘটনা শোনার পর আমরা সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে গেছি। ওর পিতা-মাতাকে খোঁজার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাইকিংসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছি।’ রাজাপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, ‘বিষয়টি অত্যন্ত নির্মম। ইতিমধ্যে বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। বেল্লালের পরিবারকে খুঁজে বের করতে থানা পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’ ইউএনও শাহ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বেল্লালের পরিবারের সদস্যদের পেলে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে তাকে নিতে হবে। অন্যথায় বেল্লালকে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সেভহোমে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর