মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীর্ষ কর্তা নেই ২৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনহীন শাখা ক্যাম্পাস, ট্রাস্টি বোর্ড দ্বন্দ্ব সনদ-বাণিজ্যসহ নানা সমস্যা

আকতারুজ্জামান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুমোদনহীন শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা, ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব, সনদ-বাণিজ্যসহ অনেক সমস্যাতেই জর্জরিত কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের পর বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২৬টির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই! এভাবে প্রশাসক ছাড়াই কিংবা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর পার করছে তারা। এতে একদিকে যেমন একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান ও স্বচ্ছতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ইউজিসি বলছে, অনিয়ম করতেই ইচ্ছা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব পদ শূন্য রাখা হয়েছে। সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনদপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে উপাচার্যই সনদে স্বাক্ষর করবেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বা অন্য কেউ উপাচার্যের স্বাক্ষর করে সনদ তুলে দিচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের। উপাচার্যের নাম করে যারা সনদে স্বাক্ষর করছেন, তা আইনগতভাবে বৈধ হচ্ছে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও অনেক কিছুই বৈধ হচ্ছে না।’ ইউজিসি জানায়, দেশে বর্তমানে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চলছে ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। সূত্র বলছে, ২৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্যপদ পূরণে কয়েক দফা তাগিদ দেওয়া হলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। শিগগিরই আবারও এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নোটিস পাঠানো হবে। একই সঙ্গে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। এ তালিকায় আরও রয়েছে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহীতে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নারায়ণগঞ্জে রণদাপ্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বরিশালে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কুমিল্লায় সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীতে অবস্থিত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে প্যানেল প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এগুলোতে এ তিন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে— বগুড়ার পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রাজধানীতে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা রাখা এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিগগিরই রিমাইন্ডার দেব। এর পরও যদি তারা এ পদগুলো পূরণে অপারগতা প্রকাশ করে, তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, যাতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’ চেয়ারম্যান বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছা করেই এসব পদ ফাঁকা রেখেছে। এমনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যারা আয়ের অ্যাকাউন্ট অডিট রিপোর্ট দীর্ঘ ২১ বছরেও জমা দেয়নি! এরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। কোনো পদ শূন্য হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্যানেল প্রস্তাব ইউজিসিতে পাঠাবে এমনটাই আইনে রয়েছে। এরপর প্রস্তাবটি ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে থাকে। মন্ত্রণালয় সেগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর