বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফোর লেন হচ্ছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক

একনেকে অনুমোদন পেল সাত প্রকল্প, সড়কের পাশে শিল্পনগরী নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফোর লেন হচ্ছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেন হচ্ছে। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণসহ সাতটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সাত প্রকল্পে ১২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৯ হাজার ৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এদিকে সড়কের পাশে শিল্পনগরী না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য তিনি নতুন প্রকল্প উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম এবং আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কের অংশ। এটি চার লেনে উন্নীত হলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় যানবাহন চলাচল বাড়বে। এ ছাড়া এটি ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারী দিয়ে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তিনি বলেন, প্রকল্পটির আওতায় ১৯৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটারের মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল  ইকোনমিক কোঅপারেশন (সাসেক) করিডর ৪ ও ৯, এশিয়ান হাইওয়ে-২, বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডর-৪-এর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক লেন, ব্যস্ততম স্থানসমূহে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সওজ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য আরএইচডি সেন্টার অব এক্সিলেন্স এবং রোড অপারেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ছাড়া বৈঠকে ২০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা ও রংপুর আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন প্রকল্প, ২২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প, ২১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী প্রকল্প, ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাউজান শিল্পনগরী প্রকল্প, ২০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (বাকলিয়া এক্সেস) প্রকল্প এবং ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ভদ্রা ও সালতা নদী পুনঃখনন প্রকল্প। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— ১৯৮ দশমিক ৯৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, মাটির কাজ ১২৭ দশমিক ৪৩ লাখ ঘন মিটার, ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ধীরগতিসম্পন্ন গাড়ির লেনসহ নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ, ১ হাজার ৯২২ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩২টি সেতু, ২ হাজার ৬৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি ফ্লাইওভার, ৪১১ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস, ১৬১টি কালভার্ট, ৩৯টি আন্ডারপাস ইত্যাদি।

সড়কের পাশে শিল্পনগরী নয় : সড়কের পাশে শিল্পনগরী না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সড়ক ঘেঁষে শিল্প-কারখানা স্থাপন করলে সড়কের সম্প্রসারণে জটিলতা তৈরি হয়। সড়ক-মহাসড়কের এখন যে প্রস্থ, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। তাই মূল সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। গতকাল একনেক সভায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সভা শেষে এ নির্দৃেশনার কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সড়ক প্রশস্ত হবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন থেকে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে দেশি-বিদেশি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সড়কগুলো হবে টোলভিত্তিক। নির্মাণ শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টোল আদায় করবে। এরপর মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নেবে সরকার।

সর্বশেষ খবর