বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গাবতলীতে নজরকাড়া জর্দান

জমে উঠছে পশুর হাট

মোস্তফা কাজল ও মাহবুব মমতাজী

গাবতলীতে নজরকাড়া জর্দান

ট্রলার থেকে নামানো হচ্ছে গরু। গতকাল পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে —রোহেত রাজীব

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাক বোঝাই করে পশু নিয়ে আসছেন বেপারিরা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন আজ থেকে না হলেও আগামীকাল থেকে রাজধানীর স্থায়ী গাবতলীর হাটসহ অস্থায়ী ২৩টি পশুর হাট পুরোপুরি জমে উঠবে।

গতকাল গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া থেকে আনা জর্দানকে ঘিরে উত্সুক  মানুষের ভিড়। কেউ কেউ জর্দানকে নিয়ে তুলছেন সেলফি। বেপারি এই গরুর দাম হাঁকছেন ১২ লাখ টাকা। আর কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল থেকে নিয়ে আসা একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী হাটগুলো ঘুরে আরও দেখা গেছে, হাট গবাদিপশুতে ভরপুর। ক্রেতাদের আকর্ষণে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি ভেসে আসছে হাটের মাইকে। গাবতলী হাটে অন্য একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এ গরুটি আনা হয়েছে কুষ্টিয়া থেকে। অনেকে জর্দানের মালিক নজরুল ইসলামকে (জর্দা) জিজ্ঞাসা করে গরুর বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, গরুটির নাম আমার নামের সঙ্গে মিল করে রেখেছি। আমার নামের শেষে জর্দা রয়েছে, তাই ওর নাম জর্দান রেখেছি। তিনি আরও বলেন, গত বছর সাড়ে ৪ লাখ টাকায় এই গরুটি ক্রয় করি। এতদিন খুব যত্নে জর্দানকে লালন-পালন করছি। আমি সব সময় মনে করি জর্দান আমার পরিবারের সদস্যের মতোই আপন। জর্দানের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ করেছি ১২ লাখ টাকা। গতকাল অনেকেই ওর দাম ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছেন, আমি বিক্রি করিনি। ১০ লাখ টাকা দামের গরুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা তিলাম হোসেন উত্তরে বলেন, গরুটির কোনো নাম রাখা হয়নি। তবে গ্রামের সবাই ফিজিয়ান গরু নামেই চেনে। কারণ ফিজিয়ান গরুর বীজ থেকেই এর জন্ম। গতকাল সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তিলাম হোসেন গাবতলী হাটে গরুটি নিয়ে এসেছেন। গাবতলী পশুর হাটে এটিই দ্বিতীয় বেশি দামের গরু। দাম উঠেছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। এদিকে গাবতলীর হাট ঘুরে আরও বেশ কয়েকটি বড় গরু দেখা গেছে। এগুলোর দাম পাঁচ থেকে আট লাখ টাকার মতো। রাজস্থান থেকে আমদানিকৃত বড় উটের দাম পাঁচ থেকে ১৪ লাখ এবং সৌদির দুম্বার দাম চার লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে।

কমলাপুর হাট : মতিঝিলের পাশেই বসেছে কমলাপুর অস্থায়ী পশুর হাট। সেখানকার দৃষ্টিনন্দন গরুর মধ্যে সবার ওপরে আছে টাঙ্গাইলের একটি গরু। মালিক যার দাম আট লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকিয়েছেন। হাটে নিয়ে আসা গরুগুলোর মধ্যে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরু। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির গরুর মূল্য আড়াই থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা নির্ধারণ করে রেখেছেন বেপারিরা। এবার পশুর হাটগুলোতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্যান্যবারের মতোই পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো হাট নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।  লিটন নামের কুষ্টিয়ার আরেক বেপারি জানান, তিনি সোমবার থেকে হাটে গরু নিয়ে অবস্থান করছেন। তবে এবার গরুর ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন। হাটে তিনি তার গরুর দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন। মেহেরপুরের মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হামরা নিজের বাড়ির ১৬টা গরু আনছি। এইলা সব দেশাল গরু। বড়ডার দাম রাখছি আড়াই লাখ টাকা। লোকজন আসে, দাম কয় এক লাখ ৯০ আবার কেউ কয় ৮০। সোমবার থাকে আছি। চাঁন রাইত পর্যন্ত দেখমো।’ সূত্র জানায়, এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৪টি এবং উত্তরে ৯টি স্থানে কোরবানির হাট বসানো হবে। হাটগুলোতে ঈদের পাঁচ দিনের আগে বেচাকেনায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে ক্রেতারা এসে পছন্দ করে চলে যাচ্ছেন। র‌্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় রাখা হয়েছে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন।

ইস্টার্ন হাউজিং (রূপনগর) হাট : মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের ধবধবে সাদা গাভী গতকাল এ হাটের প্রধান আকর্ষণ ছিল। অভিজাত ঢাকার উচ্চবিত্তের প্রধান আকর্ষণ মীরকাদিমের গাভী। এটা একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গাভীর তুলনামূলক দাম একটু বেশি। আবদুল খালেক নামের এক বেপারি গতকাল সকাল ১০টায় ১২টি মীরকাদিমের গাভী নিয়ে হাটে আসেন। এ সময় হাটজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ঢাকার কাফরুলের বাসিন্দা এম এইচ জামান দুটি গাভী সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিনেন। শ্যামলি এলাকার খোরশেদ আলমও একটি গাভী সোয়া দুই লাখ টাকায় কিনেন। এই হাট ঘুরে আরও দেখা গেছে, বড় ও ছোট আকারের দুই থেকে প্রায় চার পাঁচ হাজার গরু বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। মাঝারি গরুগুলো গড়ে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে হাঁকতে দেখা গেছে। ছোট গরুগুলো ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হতে পারে বলে আগত ক্রেতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া হাট ঘুরে আরও দেখা গেছে, এবার ছাগলের দাম একটু বেশি। আট থেকে ১০ কেজি ওজনের ছাগল আট থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের ছাগল বা খাসি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর