বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাকিস্তান যাওয়ার সময় আটক দুই ‘জঙ্গি দম্পতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল ওরা। সেখান থেকে আফগানিস্তান হয়ে সিরিয়া। এমনই পরিকল্পনা ছিল তাদের। এমন খবর পৌঁছে যায় র‌্যাব সদস্যদের কাছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-২ যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাকড়াও করে দুই দম্পতিকে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— মারজিয়া আক্তার সুমি (১৯), তার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে সুলতান মাহমুদ ওরফে মাহমুদ (১৮) এবং মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনুল (৩৪) ও তার স্ত্রী নাহিদা সুলতানা (৩০)।

র‌্যাব-২ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে গতকাল  সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে ফার্মগেট থেকে জেএমবি সদস্য সুমি, তার স্বামী মাহমুদ এবং আমিনুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নিজ বাড়ি থেকে আমিনুলের স্ত্রী নাহিদা সুলতানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জিহাদি বই, লিফলেট, সিডি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মুফতি মাহমুদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তথা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা গোপনে জিহাদের পরিকল্পনাও করে যাচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের ফলে গ্রেফতারকৃতরা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা বিদেশে বা পাকিস্তানে যোগাযোগও করেছে। অপেক্ষা করছিল বিদেশ থেকে টাকা আসার জন্য। টাকা এলেই তারা পাকিস্তানে পাড়ি জমাত। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, দেশে নব্য জেএমবির চার-পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কয়েকটি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। তারা হত্যাসহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য এসেছে র‌্যাবের হাতে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমি জানিয়েছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর জেএমবির থ্রিমা ও টেলিগ্রাম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। এই গ্রুপটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। মূল কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী অফিসিয়াল গ্রুপের হিজরত শাখাটি ‘তালিফ’ (নিক নেম) নামে পরিচালনা করা হয়। এই অফিসিয়াল গ্রুপটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক দ্বারা পরিচালিত হয়। এ গ্রুপের কাজ হলো বাছাইকৃত সদস্যদের বাংলাদেশের ভিতরে এক একটি করে অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া এবং অভিযান সফল হলে তাদের বিদেশে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ গ্রুপ থেকে আফিফ, কাইফ, জাইশান ও মফিজ নামে আরও অনেকের সঙ্গে সুমির কথা হয়। এভাবে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ২০ আগস্ট বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তিনি। সুমি পাবনার সুজানগরের উলাট গ্রামের মনসুর আলী শেখের কন্যা। বাড়ি থেকে পালানোর পর সংগঠনের সিদ্ধান্তে জেএমবি সদস্য মাহমুদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সর্বশেষ তারা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন। মাহমুদ নব্য জেএমবির থ্রিমা ও টেলিগ্রাম গ্রুপে কাজ করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল জানিয়েছেন, তিনি ও তার স্ত্রী নাহিদা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের লোক সংগ্রহ এবং তাদের প্রভাবিত করতেন। দুই সন্তানের বাবা আমিনুল সংগঠনের সিদ্ধান্তে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নাহিদাকে বিয়ে করেন এবং দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এদিকে নাহিদা জানিয়েছেন, তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হন। পরবর্তীতে দাওয়াতুল ইসলাম অ্যাপস ব্যবহার করতেন। আদর্শিক কারণে ও জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী দলে যুক্ত হওয়ায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তিনি ২২ মে আমিনুলকে বিয়ে করেন।

সর্বশেষ খবর