বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভুল কার

‘সাক্ষরতা’ দিবসের বদলে ‘মাতৃভাষা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের। তাতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী  মোস্তাফিজুর রহমান ‘৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পাঠ করে বসেন। সংবাদকর্মীদের হাতেও বিতরণ করা হয় ভুলেভরা ও তথ্য-উপাত্তহীন লিখিত বক্তব্যের কপি। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এর আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গণশিক্ষাসহ কয়েক মন্ত্রণালয়েই কানাঘুষা হচ্ছিল এই ভুল নিয়ে। কিন্তু কার ভুলে সংবাদ সম্মেলনের কপিতে সাক্ষরতা দিবসের স্থলে ‘মাতৃভাষা দিবস’ লেখা হলো, তা কেউ খোলাসা করলেন না। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের কাছে কয়েক দফায় মোবাইলে কল ও মেসেজ দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ওই মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কম্পোজ করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে। ভুলের বিষয়টি আমরা স্বীকার করে সংশোধন করে দিয়েছি।’

মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ফিজার দেশে সাক্ষরতার চিত্র ও সাক্ষরতা দিবসের কর্মসূচি তুলে ধরবেন এমন আশা করেছিলেন সাংবাদিকরা। দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের সময় নির্ধারিত থাকলেও শুরু হয় প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে। এরই মধ্যে অনেক সংবাদকর্মী সম্মেলনের নির্ধারিত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। পরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে শুরু করেন মন্ত্রী। দুই পৃষ্ঠা লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গিয়ে শুরুতেই মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ বছর ২০১৬ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে।’

এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, ভুল হচ্ছে। তখন থেমে যান মন্ত্রী। বলেন, ‘কে লিখেছে এটা?’ কক্ষে কেউ কেউ বলে ওঠেন, ‘হয়তো কপি পেস্ট করতে গিয়ে এমন ভুল হয়েছে।’ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। মন্ত্রীর একান্ত সচিব শেখ আতাহার হোসেনকে দেখা যায় একটি ফাইল হাতে নিয়ে মন্ত্রীর ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরে ‘স্যরি’ বলে আবার শুরু করেন মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলন শেষে নজরুল ইসলাম খান কয়েক কর্মকর্তাকে শাসিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পঠিতব্য কপি মন্ত্রীকে আগে না দেখানোর বিষয়ে কৈফিয়ত চান।

মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ অপরিহার্য। সরকার আধুনিক ও কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার হার ও বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। পরে সাক্ষরতা দিবস পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। দেশে সাক্ষরতার হারের ব্যাপারে কোনো পরিসংখ্যান না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘একেক পরিসংখ্যানে একেক রকম সাক্ষরতার হারের উল্লেখ রয়েছে। সাক্ষরতা নিয়ে ২০১১ সালে সবশেষ জরিপ হয়েছে, তাই সাক্ষরতার হারের কথা বলিনি।’ ২০১৬ সালে এসে অনেক এলাকাই শতভাগ সাক্ষরতার আওতায় এসেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু মিডিয়ায় তা তেমন আসছে না। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রুহুল আমিন সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর