শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরল না হাজারীবাগের ট্যানারি

জিন্নাতুন নূর

সরল না হাজারীবাগের ট্যানারি

এখনো প্রস্তুত হয়নি সাভারের চামড়া শিল্পনগরী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে     কোরবানির ঈদ। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করতে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করা পর্যন্ত প্রতিটি ট্যানারি মালিককে ক্ষতিপূরণ বাবদ দৈনিক ১০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তবে এই ঈদেও হাজারীবাগের চামড়া ব্যবসায়ীরা পুরনো ঠিকানায় থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করবেন। ফলে এবারও কোরবানির চামড়া পোস্তা হয়ে হাজারীবাগেই যাচ্ছে। কারণ, সাভারের শিল্পনগরীতে ট্যানারি শিল্পের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঈদের আগে ২০-৩০টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হবে। বাকিগুলোও আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে সাভারে চলে যাবে। ফলে সব মিলিয়ে আশা করা হচ্ছে, এটিই চামড়া ব্যবসায়ীদের হাজারীবাগে শেষ ঈদ। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর পর্যবেক্ষণ কমিটির তথ্যে, সাভার চামড়া শিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) দুটি মডিউলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে সিইটিপির বাকি দুটি মডিউলের নির্মাণকাজ ধীর গতিতে চলছে। এদিকে ট্যানারির বর্জ্য তিনটি ইপিএসের (বর্জ্য পাম্পিং স্টেশন) মাধ্যমে সিইটিপিতে যাবে। বর্জ্য ইপিএস হয়ে সিইটিপিতে যাওয়ার পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। ২ নম্বর ইপিএসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও ১ নম্বর ইপিএসের নির্মাণকাজ চলছে। আর তিন নম্বর ইপিএসের নির্মাণ কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে পবা এই তথ্য তুলে ধরে। এই পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ৩৯টি ট্যানারিতে ট্যানিং ড্রাম স্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু এগুলোর বিদ্যুৎ সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। আর ছয়টি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সিসিআরইউ চালু না হওয়ায় ক্রোমিয়াম মিশ্রিত বর্জ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইপিএস-১ সম্পন্ন না হওয়ায় পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য ইপিএস-২ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সাবস্টেশন নির্মাণ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ১৪২টি ট্যানারি আবেদন করেছে। ট্যানরিগুলোর বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন নির্মাণ করেছে। কিছু নির্মাণাধীন। আর সব কিছু প্রস্তুত হলেও বিদ্যুতের অভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব হবে না বলে পর্যবেক্ষণে জানানো হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, শিল্পনগরীতে ১৫৪টি ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির ভবন আংশিক প্রস্তুত। ১০টি ট্যানারির দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। কিছু ট্যানারির পাইলিং কাজ শেষে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আনা হচ্ছে যন্ত্রপাতি। কিছু কারখানায় আনা হয়েছে চামড়া। চালু হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে মারসন্স ট্যানারি, রিলায়েন্স। চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে এপেক্স, আজমেরি, প্রিন্স, সাথীসহ ২৫-৩০টি কারখানা। এই কারখানাগুলো কোরবানি ঈদের চামড়া সাভারে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ২০০৯ সালের ৩ জুন আরেক আদেশে ট্যানারি সরানোর জন্য ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপর বেশ কয়েকবার সরকার পক্ষের আবেদনে সময়সীমা বাড়ানো হলেও ট্যানারি স্থানান্তরে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এর মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ গত ১৮ জুলাই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪টি ট্যানারির মালিককে পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দেওয়াসহ সরকারি চাপে পড়ে ট্যানারি মালিকরা ধীরে ধীরে সাভারে যেতে শুরু করেছেন। তবে মালিকরা অভিযোগ করেছেন, সিইটিপি এখনো প্রস্তুত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, প্রস্তুত হওয়া দুটি মডিউল দিয়ে এখন ৩০টি কারখানা উৎপাদনে যেতে পারবে। বর্তমানে হাজারীবাগে থাকা ১৫০টি ট্যানারিকে প্রতিদিন মোট ১৫ লাখ টাকার জরিমানা গুনতে হচ্ছে। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় তাদের ট্যানারি স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ঈদের আগেই ১২টির বেশি ট্যানারি সেখানে যাবে। সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম জানান, ঈদের আগে সিইটিপি’র দুটি মডিউল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে। এতে ৩০টির বেশি ট্যানারির বর্জ্য শোধন করা যাবে। আর সলিড ওয়েস্ট ডাম্পিং প্রক্রিয়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। আর চালুর অপেক্ষায় থাকা ট্যানারিগুলোর বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, ঈদের আগে ২০ থেকে ৩০টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হবে। আর ঈদের তিন-চার মাস পরেই বাকি কারখানাগুলোর স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ কারণে এই কোরবানি ঈদের হাজারীবাগে তারা চামড়া সংরক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম করবেন।

সর্বশেষ খবর