নারায়ণগঞ্জে ‘অপারেশন হিট স্ট্রং ২৭’-এ নিহত তিন জঙ্গির একজন যশোরের কলেজছাত্র কাজী ফজলে রাব্বি। তার পিতা যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহ ‘জানতে ইচ্ছা হয়’ শিরোনামে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন বরাবর একটি আবেগমাখা চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে কাজী ফজলে রাব্বি, আমার অনেক আরাধনার ফসল। নিজেরা না গিয়ে কারা তাকে যশোর থেকে ঢাকা পাঠাল, আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয়। নিজেদের ছেলেকে ঘরে রেখে কারা আমার ছেলেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল, আমার জানতে ইচ্ছা হয়। একটু চোখের আড়াল হলেই যে মোবাইল ফোনে রিংয়ের পর রিং করত, অথচ পাঁচটা মাস ধরে কারা তার বাবা-মাকে একটা রিং পর্যন্ত করতে দেয়নি, আমার জানতে ইচ্ছা হয়। আমার একমাত্র ছেলেকে বিভ্রান্ত করে কে বা কারা একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিল, আমার জানতে ইচ্ছা হয়। তারা নিজেরা বেঁচে থাকবে, অথচ আমার ছেলেকে এত অল্প বয়সে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো কঠিন দীক্ষা দিল, আমার জানতে ইচ্ছা হয়। সে জামায়াত-শিবির পছন্দ করত না, তারপরও কে তাকে এমনভাবে ধ্বংস করল, আমার জানতে ইচ্ছে হয়।’
চিঠিতে রাব্বির বাবা আরও লিখেছেন, ‘আমার কোলে বসে তার পড়া জীবন শুরু হয়। সে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাইমারি স্কুল, যশোর জিলা স্কুল, ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার পর যশোর সরকারি এমএম কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়। সে ছিল আমার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আমি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে চেয়েছিলাম, বাদশা বাবরের মতো আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও ছেলেকে ফিরে পেতে চাই’। তিনি লিখেছেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে এত বড় করতে আমার মেধা, শ্রম, অর্থ অকাতরে ব্যয় করেছি। তাকে কারা বিভ্রান্ত করে আমার সর্বনাশ করল, আমি শুধু একবার তাদের দেখতে চাই।’
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জহুরুল হক হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদে রফিকুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে জয়যুক্ত করি। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরববাজারে রফিকুল ইসলামের কাছে জিজ্ঞেস করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আমার অন্য ভাইয়েরা সবাই আওয়ামী লীগ করে। আমার দুই জামাইয়ের একজন সরকারি কর্মকর্তা, আরেক জামাইয়ের পিতা মুক্তিযোদ্ধা, তিনি মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। জামাইয়ের বড় ভাই মাগুরা জেলা যুবলীগের সেক্রেটারি। কর্মজীবনে আমি যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কোনো দলে একীভূত না হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর সফলতার সঙ্গে কলেজ পরিচালনা করে অবসর গ্রহণ করি। এমন একটি পরিবারের একমাত্র ছেলেকে কারা মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিল, মরার আগে একবার শুধু তাদের দেখতে ইচ্ছা হয়।’