শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্দরে বন্দরে শুল্ক ফাঁকির উৎসব

অর্থ পাচারের ৮০ শতাংশই হচ্ছে চোরাচালান-বাণিজ্যে : এনবিআর

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের জল-স্থল ও আকাশপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বন্দরে বন্দরে শুল্ক ফাঁকির যে উৎসব চলছে, তা দেখার যেন কেউ নেই। বৈধ ও অবৈধ পথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে বাড়ছে চোরাচালানও। সব মিলিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা শুল্ক ফাঁকিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে জলে-স্থলে ও আকাশপথের বেপরোয়া চোরাকারবারিদের ঠেকাতে কাস্টমসসহ বিভিন্ন আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা কড়া নজরদারি রাখছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান অতি সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে অর্থ পাচার হয়, তার ৮০ ভাগই হয় বাণিজ্যের মাধ্যমে। সময়ের ধারাবাহিকতায় শুল্ক ফাঁকি দিতে চোরাচালানের নতুন নতুন ধারণা ও ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চোরাচালানের মাধ্যমে হয়। এ ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় কাস্টমস ও অন্যান্য দফতর বা সংস্থাসমূহ নিজ নিজ ভূমিকা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করে চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব বন্দরে সর্বোচ্চ নজরদারি আছে। তবে সীমান্তসহ যেসব এলাকায় কাস্টমসের লোকবলের উপস্থিতি নেই, সেখানে বিজিবিকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। ফলে চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি আগের চেয়ে এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর পরিচালিত সম্প্রতিক সময়ে চোরাচালানবিরোধী আলোচিত অভিযান অপারেশন আইরিনেও বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্য আটক করা হয়। সংস্থাটির তথ্যমতে, অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, মাদক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির হুমকি মোকাবিলায় অপারেশনে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর থেকে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা দুই বাংলাদেশির কাছ থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার মূল্যের বিভিন্ন মুদ্রা, শাহজালাল বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা ৩০ কেজি ওজনের একটি পার্সেল থেকে ৭ হাজার ৪০০ পিস ভায়াগ্রা, হংকং থেকে আসা পোস্টাল পার্সেল থেকে ৮৯০ পিস পুরাতন কম্পিউটার র‌্যাম ও চীন থেকে আসা নেটওয়ার্ক সংযুক্ত কম্পিউটার রাইডার, চীন থেকে আসা পার্সেল থেকে বোমা তৈরির কাজে ব্যবহারযোগ্য সন্দেহে আড়াই কেজি ওজনের সার্কিট বোর্ড এবং স্প্রিং ও বৈদ্যুতিক তার, দুবাই থেকে আসা ১৫০ কার্টন সিগারেট ও ২০ প্যাক আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ, কোরিয়ার এক কৌটা ট্যাবলেট ও ছয়টি ধারালো ছুরি জব্দ করা হয়। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ দশমিক ২৬ কেজি ওজনের সোনার বার, মংলা বন্দরে চীন থেকে আমদানি করা দুটো কনটেইনার ভর্তি ব্যবহূত ডিজপোজেবল সিরিঞ্জ, নিডল, বোরেট সেট ও অক্সিজেন মার্কস জব্দ করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত তিন বছরে তিন টন সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, যার মূল্য এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর আটক করা হয়েছে ১৩০ জনকে। গোয়েন্দা তত্পরতায় আরও প্রায় ৫০০ মণ সোনা চোরাচালান প্রতিরোধ করা হয়েছে। আটক করা সোনা আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে পোস্টাল ও কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, মাদক ও নিরাপত্তার ঝুঁকি সম্বলিত পণ্য পরিবহন হয়। আসিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ ধরনের আটকের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কাস্টমস সূত্র জানায়, সীমান্তে চোরাচালান কয়েক গুণ বেড়েছে। আসছে বিস্ফোরক দ্রব্য পটকাসহ নানা পণ্য। চোরাকারবারির সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে অবৈধভাবে আনা শাড়ি, থ্রি-পিস, স্টিল, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য। বাংলাদেশ সরকার বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য পটকা আমদানি নিষিদ্ধ করলেও এই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চোরাকারবারিরা হাজার হাজার শক্তিশালী পটকা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব করছে। পটকা থেকে বারুদ বের করে নিয়ে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ককটেল তৈরি  করছে।

সর্বশেষ খবর