শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খালি পদে নিয়োগ হচ্ছে না সহকারী প্রধান শিক্ষক

সরকারি মাধ্যমিক স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ৪৫৭টি। এর মধ্যে ৪৩৭টিই শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে এসব পদে নিয়োগ নেই। এমনকি পদোন্নতি দিয়েও এসব পদ পূরণ করা হচ্ছে না। এ  অবস্থার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, চাকরি শেষ করে অনেক স্কুল থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকরা অবসরে চলে গেছেন। এভাবে এ পদগুলো ক্রমে ফাঁকা হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষক যোগদানের পর একই পদে ৩০-৩৫ বছর কর্মরত থাকার পর কোনো পদোন্নতি না পেয়েই অবসরে চলে গেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত শিক্ষকদের মামলা ও আপিলের জেরেই সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম আটকে আছে। ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর সর্বশেষ এ পদে ১২১ জন শিক্ষক ও ৪৮ জন শিক্ষিকাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর পরই আটকে গেছে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির কার্যক্রম। অনেক স্কুলেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সেগুলোয় শুধু কয়েকজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাউশির মাধ্যমিক শাখা সূত্র বলছে, পদোন্নতির বিষয়ে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া দুই বছর ধরে আটকে আছে। কিন্তু সেই ‘একটি বৈঠকই’ হচ্ছে না। সূত্রমতে, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগে বিএডধারীদের যোগদানের তারিখ থেকে ও বিএড ছাড়া যোগদানকারীদের বিএডপ্রাপ্তির দিন থেকে বিবেচনা করা হতো। নিয়োগ বিধিমালা, ২০১০-তে এমনটিই রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর পদোন্নতির জন্য বিধিমালা ২০১১-কে আমলে নিয়ে বয়সের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রণয়ন করে। নিয়োগ বিধিমালায় ২০১১-তে রয়েছে, বয়সের ভিত্তিতে পদোন্নতি পাবেন চাকরিজীবীরা।

তবে পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট বিধি থাকলেই সে মোতাবেক নিয়োগ পাবেন তারা। সূত্র জানায়, মাউশির প্রণয়ন করা তালিকার প্রতিবাদে ২০১৫ সালের মে মাসে হাইকোর্টে রিট করেন ৭৫ জন সহকারী শিক্ষক। তারা ২০১০ সালের নিয়োগবিধি আমলে নিয়ে বিএডপ্রাপ্তির তারিখ থেকে পদোন্নতির দাবি জানান। এ বিধিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিতে যোগদানের তারিখ ও বিএডপ্রাপ্তির তারিখকেই বিবেচনা করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রিটের রায়ে বলা হয়, নিয়োগবিধি ২০১০ ও ২০১১ সাংঘর্ষিক। আরও বলা হয়, ২০১০-এর নিয়োগবিধির মাধ্যমেই সিনিয়রিটি বিবেচনা করা হবে। হাইকোর্টের রিটের এই রায়ের বিরুদ্ধে ১১ জন সহকারী শিক্ষক আপিল করেন। মাউশি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আপিলের শুনানি হওয়ার কথা। জানা গেছে, এসব জটিলতায়ই সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের পদোন্নতি ঝুলে আছে। সহকারী শিক্ষকদের অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আটকে আছে। মাউশি ও মন্ত্রণালয়ের উচিত হাইকোর্টে রিট ও আপিল করা, উচিত এ দুই পক্ষের শিক্ষকদের সঙ্গে সমঝোতায় বসা। এ ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। এতে স্কুলগুলোয় একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইনছান আলী বলেন, ২০১১ সালের নিয়োগবিধি শিক্ষকদের জন্য নয়। এটি সব সরকারি চাকরিজীবীর জন্য। সহকারী শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের নিয়োগবিধিই কার্যকর করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপিলের শুনানির আগে সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের কোনো উপায় নেই। তার পরও কীভাবে শিক্ষক সংকটের সমাধান করা যায় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’

সর্বশেষ খবর