শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঈদের হাট-বাজার

কোরবানির পশু বিক্রি জমবে আজ

মোস্তফা কাজল ও মাহবুব মমতাজী

কোরবানির পশু বিক্রি জমবে আজ

কোরবানি ঈদের তিন দিন বাকি থাকতেই রাজধানীর পশুর হাটগুলোয় ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। তবে বেচাকেনা খুব একটা হয়নি গতকাল। অনেকে গরু-ছাগলের দর-দাম জেনেই সময় কাটিয়েছেন। আজ থেকেই রাজধানীর পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। গাবতলী, কমলাপুর, রামপুরার আফতাবনগর ও মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার ভিড় বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। দল বেঁধে আসছেন অনেক ক্রেতা। কিন্তু বেচাকেনা তেমন একটা হচ্ছে না। রাজধানীর হাটগুলোয় গরু ও ছাগলের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ট্রাকে করে একের পর এক গরু নামছে। বিক্রেতারা বলছেন, ‘এবার গরুর সরবরাহ বেশ ভালো। ভারতীয় গরু এলে মাঠে মারা যাব।’ হাট ইজারাদার ও গবাদিপশুর বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মহাসড়কে যানজটের কারণে গরুভর্তি কয়েকশ ট্রাক পথে আটকা পড়েছে। সেসব ট্রাক ঢাকায় পৌঁছলে রাজধানীর হাটগুলো আরও জমে উঠবে। হাটে গরু মোটাতাজাকরণের গবাদিপশু আছে কিনা প্রাণিসম্পদ অধিফতরের একটি টিম মনিটরিং কাজ করছে।

গাবতলী হাট : আসাদ গেট এলাকা থেকে গাবতলী হাটে গরু কিনতে এসেছেন ওমর আলী নামে এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। বিক্রেতা প্রায় সাড়ে ৪ মণ ওজনের একটি দেশি ষাঁড়ের মূল্য হাঁকছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ গত বছর একই আকারের গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওমর আলী জানান, বিক্রেতারা গরুর এত বেশি দাম চাচ্ছেন। হাটে বিপুলসংখ্যক পশু এবং ক্রেতার ভিড় থাকলেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে। প্রতিটি গরুর ন্যায্য মূল্য থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। মাহফুজুর রহমান নামে আমিনবাজারের এক ক্রেতা বলেন, ‘যে বাজেট করে এসেছি, সেই দামে কোনো গরুই পাচ্ছি না। পশুর দাম এখনো চড়া। বেপারিরা দাম ছাড়ছেন না। তারা এখনো মার্কেট যাচাই করছেন।’ এদিকে হাট ঘুরে আরও দেখা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ছোট ও মাঝারি সাইজের দেশি ষাঁড়। ফরিদপুর থেকে ছয়টি বড় সাইজের গরু নিয়ে গাবতলীতে এসেছেন জয়নাল মিয়া। তার গরুগুলোর দাম ২ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে। দুই দিন আগে ঢাকায় এলেও গতকাল পর্যন্ত তার একটি গরুও বিক্রি হয়নি। জয়নাল বলেন, ‘এক বছর আগে লাখ টাকায় গরুগুলো কিনে লালন-পালন করেছি। গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি। একটি গরুকে তিন বেলা খাওয়াতে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাগে। তাই দাম বেশি।’ তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সীমান্ত দিয়ে আগের মতো ভারতীয় গরু না আসায় বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন। তারা প্রতিবারই এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে গরুর মতো গাবতলীর হাটে উট, দুম্বা ও ছাগলের দামও চড়া। বিক্রেতারা প্রায় ১০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম চাচ্ছেন ১০-১২ হাজার টাকা। সৌদি আরব থেকে আমদানিকৃত দুম্বার দাম ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ। আর ভারতের রাজস্থানের উট পাওয়া যাচ্ছে ৪ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে।

চাহিদা বেশি মাঝারি গরুর : কোরবানির পশুর হাটে বেশির ভাগ ক্রেতার আগ্রহ মাঝারি সাইজের গরু। বড় গরুর বেপারিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। ছোট বা মাঝারি গরু নিয়ে তারা চিন্তিত নন। কেননা, লাভ তুলনামূলক কম বিধায় ছোট গরু সবাই কম এনেছেন। আর মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বিক্রেতারাও আশা করছেন, আজকালের মধ্যে বেশির ভাগ পশু বিক্রি হয়ে যাবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত কবীর কাফরুল থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মাঝারি গরু কিনতে এসেছি। ৬০-৭০ হাজার টাকা বাজেট।’

ইস্টার্ন হাউজিং হাট : প্রতি বছরের মতো এবারও পল্লবীর বকুলতলা মাঠে বসেছে পশুর হাট। গতকাল দুপুরে এ হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতারা কিছুটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গরুর শরীর পানি দিয়ে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছে দিচ্ছেন। কেউ খাবার দিচ্ছেন। কেউবা বসে বসে খোশগল্প করছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই গরু বিক্রেতারা রাতযাপন করেন রাস্তার পাশেই। সেখানে গরুকে খাওয়ানোর খড়কুটো, ভুসির সঙ্গে রয়েছে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও। পলিথিনের শামিয়ানা টানিয়ে গরুকে রক্ষা করছেন রোদ-বৃষ্টি থেকে, নিজেরাও আশ্রয় নিয়েছেন মাঠের পাশে এক শামিয়ানার নিচে। ফরিদপুরের আটরশি থেকে এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক বেপারি। তিনি ২৩টি গরু এনেছেন। জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রাকে এসেছেন। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৩টি গরু বিক্রি হয়েছে। হাট এখনো পুরোপুরি জমেনি। গতকাল জুমার নামাজের পর জমতে শুরু করে। আজ থেকে এ হাট আরও জমবে, তার আশা। তিনি বলেন, ‘এবার দাম ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এখন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ?গরু আসেনি। তবে ইন্ডিয়ান গরু এলে আমরা লোকসানে পড়ে যাব। একটি ট্রাকে ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত গরু আনা যায়।’

কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে এখনো গরু আসেনি। গরু পালনে খুব খরচ। এক থেকে দেড় বছর আগে ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। প্রতিটি গরুর পেছনে কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা খরচ। আশা করছি, ভালো দাম পাওয়া যাবে। তবে যদি ভারত থেকে গরু আসে তাহলে মাঠে মারা যাব।’

কমলাপুর হাট : রাজধানীর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠের পাশে বসানো হয়েছে কমলাপুরের পশুর হাট। গতকাল ঈদের ছুটির প্রথম দিনে হাটে ক্রেতার ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। তবে ইজারাদাররা বলছেন, এখনো হাট পুরোপুরি জমে ওঠেনি। আজকালের মধ্যে জমে উঠবে বলে আশা করছেন তারা। এ হাটে টাঙ্গাইলের সাদা বড় গরুর উপস্থিতি একটু বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়াও ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের সুঠাম দেহের গরুও ছিল। ছুটির প্রথম দিনে সকাল থেকে গরুর হাটে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কেউ কেউ সপরিবারে এসেছেন নিজের কোরবানির পশুটি পছন্দ করতে। ফরিদপুরের বেপারি তৈয়ব আলী বলেন, সকাল থেকে অনেকে আসছেন, দেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দাম বলে পরে আসার কথা জানিয়েছেন। নির্ধারিত যা দাম তার নিচে কোনো গরু ছাড়া হচ্ছে না।

গরু বিক্রিতে প্রত্যেক ক্রেতার কাছ থেকে শতকরা ৫ টাকা করে ‘হাসিল’ আদায় করছেন ইজারাদার। এজন্য হাটের বিভিন্ন স্থানে ২১টি হাসিল বুথ বসানো হয়েছে। গরুর বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি মনিটরিং টিমও কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জাল টাকা শনাক্তকরণের মেশিন নিয়ে ক্যাম্প বসিয়েছে মতিঝিল থানা পুলিশ। হাজ্জাজ নামের ইজারাদারের এক কর্মী জানান, এবার দেখা যাচ্ছে গরুর দাম কিছুটা বেশি। বৃহস্পতিবারই বেশ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত গরু হাটে এসেছে। আরও গরু আসবে। এখনো হাট পুরোপুরি জমে ওঠেনি। সবে ছুটি শুরু হয়েছে। কাল-পরশু ক্রেতার ব্যাপক সমাগম ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর