শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঘাতক ওবায়দুলের মুখে রিশা খুনের বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা খুনের বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক ওবায়েদুল হক। ৫ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শেষে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এ বর্ণনা দেয় সে। বর্ণনায় সে স্বীকারও করেছে হত্যার কথা। প্রায় এক বছর আগে টেইলার্সে  রিশাকে প্রথম দেখেছিল ওবায়দুল। এরপর প্রেম নিবেদন এবং প্রেমের চেষ্টা চলে তার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রিশাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ওবায়দুল। এজন্য হাতিরপুলের একটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে ১২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনে। আর রিশাকে ছুরিকাঘাত করার পরপরই নিজ গ্রাম দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পালিয়ে যায়। তবু শেষরক্ষা হয়নি তার। ১ সেপ্টেম্বর সকালে নীলফামারীর ডোমারে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ঢাকায় এনে আদালতের মাধ্যমে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

সূত্র জানায়, ওবায়দুল জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে বলে, ‘আমি স্বেচ্ছায় এবং কারও বিনা প্ররোচনায় রিশা হত্যার দায় স্বীকার করলাম।’ স্বীকারোক্তিতে সে আরও বলে, ‘রিশার সঙ্গে দেখা হওয়ার দুই মাস পর আমি মোবাইলের মাধ্যমে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিই। এর কিছুদিন পর রিশা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আমি রিশার আম্মাকে ফোন দিয়ে বলি যে রিশার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে। তখন রিশার আম্মা আমাকে রিশার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন। আমি তার নিষেধ না শুনে রিশার মোবাইলে কল দিলে রিশার আম্মা ও দাদি ফোন রিসিভ করে আমাকে গালিগালাজ করতেন। তিন-চার মাস আগে রিশা আমার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। ফলে কয়েক মাস আমি রিশার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আমি রিশার সঙ্গে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার স্কুলের সামনে যাই এবং তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু এর পরও ব্যর্থ হই। একদিন আমি তার সঙ্গে জোর করে কথা বলতে চাইলে রিশা আমাকে জানায়, সে আমার সঙ্গে প্রেম করবে না। ইতিমধ্যে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, অন্য একটি ছেলের সঙ্গে রিশার প্রেমের সম্পর্ক আছে। এ কথা জানার পর আমার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রিশা যাতে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না পারে সেজন্য আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করি। ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আমি ১২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনি। ২৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার সময় ছুরিসহ স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়াই। সাড়ে ১২টার সময় রিশা সহপাঠীসহ স্কুল থেকে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজের ওপর ওঠে।  ওর কাছে গিয়ে পেটের বাঁ পাশে আঘাত করে ছুরিসহ ফুটওভার ব্রিজের নিচে নেমে দৌড়ে পালাই।

ব্যাটারি গলি দিয়ে সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবনের সামনে যাই। রাজস্ব ভবনের সামনে রাস্তার ফুটপাথে ইট-সুরকি ও ময়লার মধ্যে ছুরিটি ফেলে দিয়ে পল্টন হয়ে গুলিস্তান যাই। সেখান থেকে সদরঘাট গিয়ে নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে চাচাতো ভাই জসিমের কাছে যাই। ওই দিন বিকালবেলা কেরানীগঞ্জ থেকে কোনাপাড়ায় আমার পরিচিত টেইলার্স মাস্টার সুনীল ও গৌর হরিদের কাছে গিয়ে এক হাজার টাকা নিই। তারপর আমি শ্যামলী গিয়ে হানিফ পরিবহনে করে নিজ বাড়িতে যাই। এরপর টিভিতে রিশা মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি নীলফামারীতে আমার বেয়াই খুশবুলের কাছে যাই। সংবাদ পেয়ে রমনা থানা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে আসে।’ ওবায়দুল বলে, ‘পুলিশ আমাকে হত্যার কাজে ব্যবহূত ছুরি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি পুলিশের সঙ্গে গিয়ে ছুরি কেনার দোকান এবং সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবনের সামনে থেকে ছুরিটি বের করে দিই।’

প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজের ওপর রিশাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওবায়দুল। পরে রিশাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৃত্যু হয় রিশার।

সর্বশেষ খবর