সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঈদে দুর্ভোগে বাড়ি ফেরা

কিছুটা স্বস্তি মহাসড়কে ভোগান্তি কাওড়াকান্দি পাটুরিয়ায়

প্রতিদিন ডেস্ক

কিছুটা স্বস্তি মহাসড়কে ভোগান্তি কাওড়াকান্দি পাটুরিয়ায়

ট্রেনে তিল ধারণের স্থান নেই। তবুও ওঠার চেষ্টা। কারণ ফিরতে হবে বাড়ি। বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গতকাল —জয়ীতা রায়

ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গতকাল অধিকাংশ মহাসড়ক ছিল মোটামুটি সচল। কোথাও কোথাও যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও আগের কয়েক দিনের চেয়ে তা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও মাদারীপুরে কাওড়াকান্দি ঘাটে তীব্র যানজট ছিল গতকালও। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন রুটে যানবাহনের গতি বেড়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে মহাসড়ক। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ছাড়া মহাসড়কে নেই কোনো জটলা। গতকাল দুপুর থেকে মহাসড়কের অধিকাংশ এলাকাই যানবাহন শূন্য লক্ষ করা গেছে। বেড়েছে যানবাহনের গতি। মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় দেখা গেছে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল। তবে মহাসড়ক দিয়ে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ থাকলেও উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনে নেই কোনো বাড়তি চাপ। এ ছাড়া এই মহাসড়কের ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ গত চারদিনের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট তৌফিক ইফতেখার বিন নাসির জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ভোরে কিছু সময় মির্জাপুর থেকে রাবনা বাইপাস পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হলেও সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত যানবাহন একটু থেমে থেমে চলাচল করছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বাড়ায় মহাসড়কের ঢাকামুখী যানবাহন কিছুটা ধীরগতিতে চলাচল করছে। চার লেনের সম্প্র্রসারণ, কয়েকটি ফ্লাইওভারের কাজ, দুর্ঘটনা এবং গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় মহাসড়কের মাঝে মাঝে মহাসড়কে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে অতিরিক্ত চাপ থাকায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহনগুলো। স্বাভাবিক সময়ে যানবাহনগুলো ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করলেও বর্তমানে গতি অনেক কমে এসেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিমি. কিলোমিটার এলাকা পেরোতে সময় লাগছে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। রবিবার ভোর রাত থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, প্রচণ্ড গরমে গাড়িতে থাকা শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের নিরন্তর প্রচেষ্টায় এ মহাসড়কে কোথাও দীর্ঘস্থায়ী কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৯টি জেলার যানবাহন এ মহাসড়কে চলাচল করে। ঈদে ঘরেফেরা মানুষবাহী যানবাহনের কারণে গত তিনদিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গাড়ি চলাচল করছে। এ কারণে গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ কোনো যানজট নেই। অতিরিক্ত চাপের কারণে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে গাড়িগুলোর ধীরগতি রয়েছে।  বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ধীরগতিতে যান চলাচল করলেও গোলচত্বর পার হয়ে বগুড়া, পাবনা ও রাজশাহীমুখী মহাসড়কে চালকেরা স্বাভাবিক গতিতে যেতে পারছেন।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে হাজার হাজার লোকজন অপেক্ষা করছে। দূরপাল্লার যাত্রীরা সরাসরি ফেরিতে পার হলেও লোকাল বাসের যাত্রীরা ঘাটে এসে ফেরি ও লঞ্চের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে। যাত্রীরা ফেরি ও লঞ্চে সমান তালে পার হচ্ছে।  রাজবাড়ীর যাত্রী মোহন বলেন, আগে আমরা কাটা গাড়িতে এসে পাটুরিয়া থেকে লঞ্চে পার হয়ে দৌলতদিয়া থেকে অন্য গাড়িতে বাড়ি যেতাম। এই নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রায় ১০০ লোক মারা যাওয়ার পর থেকে এখন ফেরিতে যাতায়াত করি। তার মতো অনেকেরই অভিযোগ, ফেরিতে লোকজন বেশি পার হওয়ায় যানবাহন উঠতে বেশ সময় লাগছে।

যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ কমতে শুরু করলেও নদী পারের অপেক্ষায় অনেক লোক রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে শিশু ও নারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। 

পাটুরিয়া প্রান্তে কোনো সমস্যা না থাকলেও দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাট সমস্যা ও কয়েকটি ফেরি বিকল থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে পাটুরিয়া প্রান্তে দেড়শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এই নৌ-রুট ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এই পথে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে।  বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান জানান, এই নৌ-রুটের ফেরি বহরের ৩টি ফেরি বিকল রয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের একটি ঘাট বন্ধ থাকায় নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়াও নদীতে প্রবল স্রোতে এই নৌ-রুট পাড়ি দিতে ফেরিগুলোর প্রায় দ্বিগুণ সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে।

পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যানজট কমতে শুরু করেছে।

মাদারীপুর : কাওড়াকান্দি ঘাটে তীব্র যানজট ও অব্যবস্থাপনার কারণে ঘাটে নেমেই অসহনীয় ভোগান্তি আর চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। সকাল থেকে কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যত্রতত্র আটকে আছে নৈশকোচ, পণ্যবাহী ট্রাক, গরুবোঝাই ট্রাক, প্রাইভেট কার, লোকাল বাস, আন্তঃজেলা পরিবহন, ইজিবাইক, নসিমন-করিমনসহ ছোট ছোট যানবাহন। ফলে, শিমুলিয়া থেকে কাওড়াকান্দি ঘাটে নেমে ৩/৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাত্রীদের গন্তব্যের গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এতেও নিস্তার নেই, আবার পড়তে হচ্ছে যানজটের কবলে।

সড়ক, মহাসড়ক ও সংযোগ সড়কের ওপর এলোমেলোভাবে পরিবহন রাখায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে পাঁচ্চর অ্যাপ্রোচ সড়কের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আটকে আছে অসংখ্য পরিবহন। তীব্র যানজটের কবলে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। দুই দিন ধরে ঘাট এলাকায় আটকে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক গরুবোঝাই ট্রাক। যানজটের কবলে পড়ে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হচ্ছে মহাসড়কে এমন অভিযোগ গরু ব্যবসায়ীদের। এদিকে পদ্মায় নাব্য সংকটে ফেরি চলাচলে দীর্ঘসময় লাগায় এ দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনসারউদ্দিন বলেন, চাপ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভাড়ার বিষয়টি সহনীয়ই রয়েছে। তবে অপর প্রান্ত থেকে গাড়ি খালি আসায় ভাড়া কিছুটা বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর