সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জমজমাট পশুর হাট

মোস্তফা কাজল

জমজমাট পশুর হাট

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুর হাট। গাবতলী হাটে গতকাল ভিড়—রোহেত রাজীব

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট। গতকাল সকাল থেকেই প্রতিটি হাটে গরু-ছাগল ও মহিষ বিক্রির ধুম পড়েছে। তবে দাম কিছুটা বেশি বলেই জানিয়েছেন ক্রেতারা। বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা ছিল বেশি। গতকাল রাজধানীর গাবতলী, কমলাপুর, আফতাবনগর ও রহমতগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট পুরোপুরি জমে উঠেছে। গবাদিপশুর দাম ছিল গত দুই দিনের তুলনায় কিছুটা কম। গরুর পাইকাররা জানান, আজ শেষ দিনে বিক্রি আরও বাড়বে। রাজধানীর অনেকে শেষ দিনের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। এ বছর ঈদুল আজহায় রাজধানীতে দুই ডিসিসির ২৩টি পশুর হাট বসেছে। বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আনাগোনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। ক্রেতারা পশুর দাম শুনছেন আবার অনেকেই দাম মনের মতো হলে তা কিনে ফেলছেন। গতকাল বৈরী আবহাওয়ার জন্য ক্রেতার সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন হাটের কর্তৃপক্ষ। তবে আজ শেষ দিনে হাট পুরোদমে জমে উঠবে।

গাবতলী হাট : এ হাট থেকে মাঝারি আকারের ষাঁড় কিনে বাড়ি ফিরছিলেন শাহাদাত হোসেন নামে শেওড়াপাড়ার এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে ষাঁড়টি কিনেছেন। দাম আরও বেড়ে যেতে পারে সে আশঙ্কায় তিনি আগেভাগেই কিনেছেন। শাহাদাত জানান, মধ্যবিত্তদের চাহিদা ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু। এজন্য এ সাইজের গরুর দাম একটু বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি বড় গরুরও ক্রেতা কম ছিল। গাবতলী হাটের স্বেচ্ছাসেবক ওমর ফারুক বলেন, গতকাল সকাল থেকে বিক্রি জমে উঠেছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি হয়েছে।

রহমতগঞ্জ হাট : রহমতগঞ্জের কোরবানির গরুর হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীই যেন বেশি থাকে। দরদাম যাচাই করতেই হাটে এসেছেন অনেকে। যাদের বাসাবাড়িতে গরু রাখার জায়গা আছে, তাদের কোরবানির পশুটি কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকায় কয়েক বছর থেকেই কোরবানি উপলক্ষে রহমতগঞ্জ এলাকায় বিশাল হাট বসে। শনিবার মধ্যরাতে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর লোকের সমাগম। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা মধ্যরাত। আজিমপুর থেকে আগত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দিনে অফিস ও অন্যান্য কাজ থাকায় হাটে আসা সম্ভব ছিল না। এজন্য রাতে এসেছি। বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, এখন বাজারে গত তিন দিনের তুলনায় দাম একটু কম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে— আজ এ দাম একটু সহনীয় পর্যায়ে চলে আসতে পারে বলে আশাবাদী তিনি। ছোট সাইজের গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘গরুটি ৩৬ হাজার টাকায় কিনেছি।’ গরু ব্যবসায়ী কাশেম আলী বলেন, ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে ৪ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে এ হাটে। আরও রয়েছে মীরকাদিমের ১০-১২টি গরু। এসব গরুর সঙ্গে ছোট-বড় সাইজের ছাগলও উঠেছে। শনিবার রাত থেকে এ হাট জমে উঠেছে।

আফতাবনগর : রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট আফতাবনগরে গতকাল দুপুর থেকে প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। কাদা ও ধুলিমুক্ত, হয়রানিবিহীন পরিবেশে কোরবানির পশু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। সারা দেশ থেকে প্রচুর গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। এমনকি নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের গরুও পাওয়া যাচ্ছে আফতাবনগরের হাটে। পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় গরুও, তবে পরিমাণে তা খুবই কম। এবার ভারত থেকে গরু কম আসায় দেশি গরুর খামারিরা খুব খুশি। পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিরা নিজেদের খামারের সাইনবোর্ড লাগিয়ে গরু বিক্রি করছেন। বাজারে ছোট গরুর চাহিদা ছিল বেশি, তুলনামূলকভাবে দামও বেশি। ছোট গরু গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকায়। মাঝারি গরুর দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বড় গরু বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। গতকাল দুপুরের পরই জমে ওঠে কোরবানির পশুর হাট। দুপুর থেকে প্রচুর গরু বিক্রি হয়। দাম ছিল শনিবারের চেয়েও কিছুটা কম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা ছিল সন্তোষজনক। হাটে জাল নোট শনাক্তে কাজ করেছে অনেক টিম।

কমলাপুর : গতকাল বিকালে হঠাৎ করেই কমলাপুর কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনা জমে ওঠে। পাশাপাশি নতুন গরু-ছাগল নিয়ে ট্রাকের পর ট্রাক নামে সেখানে। কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে দক্ষিণ কমলাপুর বালুর মাঠসহ টিকাটুলী মোড়স্থ ব্রাদার্স ক্লাব পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট এ পশুর হাটে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তিন দিন আগে কুষ্টিয়া থেকে রইচ উদ্দিনসহ ২৩ জন বেপারি কমলাপুর কোরবানির পশুর হাটে ৪১টি গরু নিয়ে আসেন। গতকাল বিকালে তাদের মাত্র ১টি গরু অবিক্রীত ছিল। রইচ উদ্দিন জানান, ‘গত দুই বছর হাটে লস দিতে হয়েছে। এবার মোটামুটি লাভ নিয়েই আগেভাগে বিক্রি করে দিয়েছি।’ আরেক বেপারি রবিউল ইসলাম জানান, তারা হাটে ১৫টি গরু এনেছিলেন। গতকাল বিকালের আগেই ১২টি বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, তাদের গরুগুলো একটু বড়। ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন গরুগুলো। তিনি বলেন, খুব বেশি লাভ হয়নি। আবার লসও হয়নি।

কচুক্ষেত বাজার : এ হাটেও গতকাল প্রচুর গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে বুধবার কাফরুলের কচুক্ষেত হাটে আসেন টিপু মিয়া। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ক্রেতারা শুধু দেখেছেন। মনে করেছিলাম এবার লোকসান গুনে বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু এখন মোটামুটি ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। সামান্য লাভ হলেই আমরা গরু ছেড়ে দিচ্ছি।’ এ হাটের ইজারাদার বলেন, গতকাল থেকে হাটে প্রচুর বেচাকেনা চলছে। এর আগের তিন দিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮৬টি গরু। আজ শেষ দিন হওয়ায় হাট আরও জমজমাট হবে বলে তিনি আশা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর