শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজধানী ফেরেনি চেনা রূপে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ফেরেনি চেনা রূপে

ঈদের ছুটির পর অফিস-আদালত খুললেও গতকাল রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক ও ফ্লাইওভারই ছিল ফাঁকা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা ছয় দিনের ছুটি শেষেও কাটেনি ঈদের রেশ। ফলে রাজধানী ঢাকা ফিরে পায়নি জনসমুদ্রের ভিড় কিংবা যানজটের চিরচেনা রূপ। গতকাল নগরীর রাজপথ, অলিগলি ছিল অনেকটাই ফাঁকা। দোকানপাটও খোলেনি। সবখানেই বিরাজ করেছে ঈদের আমেজ।

ওয়াকিবহালরা বলছেন, আগামী রবিবার থেকে অবশ্য অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হবে। রাজধানী ফিরে পাবে পুরনো ব্যস্ত চেহারা। এদিকে ঈদ আমেজের কারণে ফাঁকা ঢাকার স্বাদ উপভোগ করছেন অবস্থানকারী নাগরিকরা। রাজপথে ভিড় নেই, নেই জটলা। ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে শুক্রবার থেকেই রাজধানী ফাঁকা। যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে যানজটমুক্ত রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে আধা ঘণ্টার বেশি লাগেনি। এরই জের ছিল ঈদের ছুটির শেষ দিনেও।

দেখা গেছে গুলশান, বনানী, মহাখালী, সাতরাস্তা, তেজগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, মগবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর, কাকরাইল, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, মিরপুরে ছিল ফাঁকা পথঘাট। গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। চলেছে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। তবে ভিড় কিছুটা দেখা গেছে বিনোদন কেন্দ্রকেন্দ্রিক। এ ছাড়া আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও দূরপাল্লার রুটে অবশ্য চলাচলকারী কোচগুলোর ছোটাছুটির অন্ত ছিল না। বিভিন্ন জেলা শহর থেকে মিনিটে মিনিটে রাজধানীতে এসে ঢুকেছে বাস।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ঈদযাত্রার নানা দুর্ভোগের ক্লান্তি কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে কর্মস্থলে ফেরার পালা। প্রিয়জনের সান্নিধ্য ছেড়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের কর্মস্থলের উদ্দেশে পা বাড়িয়েছেন লাখো মানুষ। ঢাকায় ফেরা অধিকাংশ মানুষ জানিয়েছেন, ফিরতি পথের মানুষের ঢল না নামলেও শুরু হয়েছে নানা ভোগান্তি। চাকরির তাগিদে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই কর্মস্থলে ফেরা মানুষকে জিম্মি করে কালোবাজারিরা বাস-লঞ্চ-ট্রেনে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন। রাজধানীফেরত মানুষের ভিড় দুপুরের পর বাড়তে থাকে। সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও সদরঘাট নৌ টার্মিনাল ঘুরে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া সদরঘাটে আধা ঘণ্টা পর পর ভিড়ছে একের পর এক লঞ্চ। সদরঘাটে নেমেই যাত্রীরা নিজ নিজ বাসায় ফিরছেন। কারণ রবিবার থেকে অফিস। তাই বড় ধরনের ভিড় এড়াতে ছুটির শেষ দিনেই রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ভোরেই রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন, গাবতলী-মহাখালী-সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। টার্মিনালগুলোয় ফিরতি মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো ট্যাক্সিক্যাব বা সিএনজি অটোরিকশা পাননি। ভুক্তভোগীরা জানান, ‘ঈদে বাড়ির যাওয়ার সময় যেভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছি, ফেরার সময়ও সেভাবেই পদে পদে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’

আরও দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীর ভিড় ছিল লক্ষণীয়। বুধবার ছিল ঈদের ছুটির শেষ দিন। ছুটি শেষ হওয়ার পরও গতকাল রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ছিল ঈদের উৎসবমুখর পরিবেশ। যারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাননি তারা পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমান।

প্রথম কর্মদিবসে নিষ্প্রাণ সচিবালয় : ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় ছিল অনেকটাই নিষ্প্রাণ। অধিকাংশ মন্ত্রণালয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বলতে গেলে ফাঁকাই ছিল সচিবালয়। সচিবালয়ে দর্শনার্থী অভ্যর্থনা কক্ষেও ভিড় ছিল না। শুধু সচিবালয় নয়, সরকারি প্রায় সব অফিস, আদালত এবং ব্যাংকপাড়ায়ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। সর্বত্রই ঈদের আমেজ বিরাজ করেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা অফিসে উপস্থিত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি করে।

সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুসহ হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তারা নিজ নিজ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করায় প্রথম কর্মদিবসে অনেকেই উপস্থিত হতে পারেননি।

দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দফতর ফাঁকা। উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে রবিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় গত শুক্রবার থেকে টানা ছয় দিনের ছুটি ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো। গতকাল অফিস খোলা থাকলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই এ দিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। কারণ আগামী দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে গতকাল প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন, আগামী রবিবার থেকে ধীরে ধীরে আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠবে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে উপস্থিতির হার ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।

এদিকে গতকাল পুরান ঢাকার আদালতপাড়ার চিত্রও প্রায় একই রকম ছিল। সেখানেও ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের মতো। বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা।

চট্টগ্রাম : ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ছয় দিনের ছুটি শেষ। কিন্তু গতকালও ছিল ছুটির আমেজ। সকাল ৯টায় সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিসে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ অফিসই ফাঁকা দেখা গেছে। কর্মকর্তা উপস্থিতি থাকলেও কর্মচারীরা ছিলেন প্রায় অনুপস্থিত। কেউ নিয়েছেন ঐচ্ছিক ছুটি। কেউ আসছেন দেরিতে। চট্টগ্রামের সরকারি বিভিন্ন দফতরে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে পুরোদমে কার্যক্রম চলেছে বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার অফিসপাড়ার বিভিন্ন ব্যাংকের কার্যালয়, আগ্রাবাদ সরকারি কার্য ভবনসহ বিভিন্ন দফতরে দেখা গেছে ছুটির আমেজ। তবে প্রথম কার্যদিবসে অধিকাংশ সরকারি অফিসে কাজ কম হয়। শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়েই সময় পার হয়।

সর্বশেষ খবর