শিরোনাম
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ম্যাজিক পরিচ্ছন্নতায় ৩৬ ঘণ্টায় ক্লিন ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্য সব বারের তুলনায় অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীকে কোরবানির বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। দুই মেয়রের বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমার ১২ ঘণ্টা আগেই পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে ঢাকা। ডিসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বিরতিহীন শ্রম, স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সচেতনতা, স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগ— সর্বোপরি দুই মেয়রের ত্বরিত তত্পরতায় ‘ম্যাজিক পরিচ্ছন্নতায়’ ক্লিন ঢাকা উপহার পেয়েছেন রাজধানীবাসী। নগরীর দু-একটি স্থান ছাড়া প্রায় সর্বত্রই বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। এ জন্য দুই মেয়র ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, বেশির ভাগ বর্জ্যই নগরবাসী পরিষ্কার করে ফেলায় স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

ঈদুল আজহার নামাজের পরপরই পশু কোরবানি দেওয়া শুরু করেন মুসলমানরা। সেসব পশুর বর্জ্য দ্রুততার সঙ্গে অপসারণ করে শহর পরিষ্কার করতে ৪৮ ঘণ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকার দুই মেয়র। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ঈদের দিন বেলা ২টার দিকে উত্তরায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এবার নগরবাসী সচেতন থাকায় সিটি করপোরেশন বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম শুরু করার আগেই ৭০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। বাকি বর্জ্য অপসারণে ৪৮ ঘণ্টাও লাগবে না। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনও একই সময়ে ধোলাইখাল এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি জানান, এ বছর আনুমানিক ২০ হাজার টন কোরবানির পশুর বর্জ্য হতে পারে। আর তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ হবে বলেও নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতার কাজ চলবে। ঈদের দিন কোরবানির পশুর রক্ত আর বৃষ্টির পানিতে শান্তিনগর এলাকায় বয়ে যাওয়া রক্তস্রোতের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

পশু কোরবানি হওয়ার পর ধারণা করা হয়, ঢাকা শহরেই মোট ৪৪ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হয়েছে, যা পরিষ্কার করতে দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন বিরতিহীনভাবে কাজ করে। কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে নেমেছেন। ঈদের দিন বেলা ২টা থেকে তারা পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন। সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী অতিরিক্ত গাড়ি, সেনা-নৌ ও ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা ওয়াসার পানির গাড়ি, বিশেষ পলিব্যাগ ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয় বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহনও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, এবার ৫ হাজার ৮৮৪ পরিচ্ছন্নতাকর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে দক্ষিণ ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত থাকে। ময়লা-আবর্জনা ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১২৬টি খোলা ট্রাক, ৭৩টি কনটেইনার এবং পরিবেশবান্ধব ১৬টি কমপ্যাক্টর গাড়ি ব্যবহার করা হয় বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানায়, এ বছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তাদের নিজস্ব ২ হাজার ৭০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কর্মীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। মোট ৭ হাজারের বেশি কর্মী উত্তর ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত থাকে।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন সিলেট : কোরবানির পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ করে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে পেরেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। দ্রুততম সময়ে দুর্গন্ধ ও দূষণমুক্ত নগরী উপহার পেয়ে খুশি নগরবাসী। এর আগে সিসিক কর্তৃপক্ষ বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল। সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। কোরবানির সময় এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও প্রায় ১০০ মেট্রিক টন বর্জ্য। কোরবানির পর নগর পরিচ্ছন্নতা সিটি করপোরেশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাড়তি জনবল দিয়ে রাতদিন কাজ করে এ বছর মাত্র ২০ ঘণ্টার মধ্যে নগরীকে পরিচ্ছন্ন করতে সক্ষম হয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সিসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা যায়, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন ৩৫৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করে থাকেন। ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ দেওয়া হয় বাড়তি ২৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঈদের দিন বেলা ১২টা থেকে ৬০০ জন কর্মী ও ৪০টি ট্রাক দিয়ে শুরু হয় বর্জ্য অপসারণ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিশ্রুতি থাকলেও প্রায় চার ঘণ্টা আগেই নগরীর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ করতে সক্ষম হয় সিসিক কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রামে অপসারণে দৃষ্টান্ত : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংস্থাটি ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে পশু কোরবানির জন্য চসিকের নির্ধারিত ৩৭০ স্পটে নগরবাসীর কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। সব স্পটই ফাঁকা ছিল। চসিক সূত্রে জানা যায়, পশুর বর্জ্য অপসারণে এবার চসিক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব আবর্জনা অপসারণের ঘোষণা দেয় তারা। এ লক্ষ্যে ৪১টি ওয়ার্ডকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়। প্রতি জোনের নেতৃত্বে ছিলেন একজন কাউন্সিলর। বর্জ্য অপসারণে ৪১টি ওয়ার্ডে ১৮০টি গাড়ি নিয়োজিত ছিল। এর মধ্যে আবর্জনাবাহী গাড়ি ১২৬টি, ট্রাক্টর ওয়াগন ৪টি, পে-লোডার ৮টি, ড্রাম ট্রাক ৩২টি, অতিরিক্ত গাড়ি ১০টি, পানির ভাউচার ৬টি, পানির ভ্যানগাড়ি ২৫টি, পানির টেম্পো ৩টি এবং ২টি পানির ট্যাক্সি সার্বক্ষণিকভাবে পশুর রক্তসহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত ছিল।

বরিশালে ব্যতিক্রম : বরিশাল নগরীতে এবার পশু কোরবানি হয়েছে যত্রতত্র। সিটি করপোরেশন আগে থেকেই পশু কোরবানির জন্য নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১৫৬টি স্থান নির্ধারণ করে দিলেও তা কেউ মানেননি। প্রধান প্রধান সড়কের পাশে, অলিগলিতে যে যেখানে পেরেছেন পশু কোরবানি করেছেন। এ কারণে পুরো নগরী কোরবানির পশুর রক্ত আর উচ্ছিষ্টাংশে ভরে গেছে। প্রখর রোদে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশ শুকিয়ে ঈদের দিন দুপুর নাগাদ প্রকট গন্ধের সৃষ্টি হয়। এতে চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়েন নগরবাসী।

সর্বশেষ খবর