শিরোনাম
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ভেড়া পালনে ভাগ্যবদল

নওগাঁ প্রতিনিধি

ভেড়া পালনে ভাগ্যবদল

ভেড়া পালন করে যে অর্থনৈতিকভাবে ভাগ্যবদল করা যায়, তার প্রমাণ রেখেছেন নওগাঁ সদরের রামভদ্রপুর বাইপাস এলাকার ইসমাইল হোসেনসহ অনেকেই। তারা গারোল প্রজাতির ভেড়া পালন করে এই সাফল্য  পাচ্ছেন। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, দেশীয় ভেড়া থেকে যেখানে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ কেজি মাংস পাওয়া যায়, সেখানে গারোল প্রজাতির ভেড়ায় ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি মাংস পাওয়া সম্ভব। নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে এ গারোল প্রজাতির ভেড়া পালন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অধিক মাংস, ভালো বাজার দর ও সহজে পতিপালন করা যায় বলে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। নওগাঁর কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, অত্যন্ত লাভজনক এ ভেড়া বাণিজ্যিকভাবে পালন করতে এগিয়ে এসেছেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা। ইসমাইল হোসেনের খামার ঘুরে দেখা গেছে, গারোল ভেড়া পালনের নানা সুফল। ইসমাইলের পালন ক্ষেত্রে নেই কোনো উন্নত শেড পদ্ধতি বা বাড়তি খরচ। মাত্র চার বছর আগে দুটি গারোল প্রজাতির ভেড়া দিয়ে ইসমাইল তার যাত্রা শুরু করেন। এখন তার রীতিমতো একটি খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমান তার খামারে ৭০টি ছোট-বড় গারোল প্রজাতির ভেড়া রয়েছে। ইসমাইল হোসেন জানান, মাত্র ২৭ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ভেড়া সংগ্রহ করে কারবার শুরু করেন। তারপর মাত্র সাত মাসে এ ভেড়া থেকে দুটি বাচ্চা হয়। দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি— এভাবে বাড়তে থাকে ভেড়ার সংখ্যা। ইসমাইল উল্লেখ করেন, বাইপাস সড়কের দুই পাশে একটি লেদমেশিন পরিচালনা করার পাশাপাশি এ ভেড়ার খামার গড়ে তোলেন তিনি। দিনে লেদমেশিনে কাজ করার ফাঁকে ছেড়ে দেওয়া ভেড়াগুলো নজরে রাখেন। এভাবে ভেড়ার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে আজ ইসমাইল প্রতিষ্ঠিত খামারি হয়েছেন। তিনি আরও জানান, দেশীয় ভেড়া থেকে যেখানে ২০ কেজি মাংস পাওয়া কঠিন ব্যাপার, সেখানে গারোল প্রজাতির ভেড়া থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। একটি ভেড়া ১৪ মাসে দুবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার দুই থেকে তিনটি পর্যন্ত বাচ্চা পাওয়া যায়। এসব ভেড়া মাঠে ঘাসসহ গমের ভুসি ও খৈল খায়। এর ফলে বাড়তি খরচ একেবারেই নেই। ঈদের আগেই ইসমাইল ৩০টি ভেড়া বিক্রি করেছেন। একেকটি ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি জানান, এ ভেড়ার নেই কোনো রোগবালাই।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের গারোল ভেড়া প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান সম্প্রতি ইসমাইলের খামার পরিদর্শন করে বলেন, ‘এ ভেড়া পালন অত্যন্ত লাভজনক এবং বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উপযোগী। এ এলাকার যে কয়টি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ভেড়ার পালন শুরু হয়েছে সব জায়গায় সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। এ ভেড়ার মাংসও অত্যন্ত সুস্বাদু। এ মাংস তৈলাক্ত কম হওয়ায় সব মানুষের পছন্দ। একটি বড় আকারের গারোল ভেড়া উচ্চতায় ৪ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ভেড়ার লোম সংগ্রহ করেও বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির সুযোগ রয়েছে।’ নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা গারোল প্রজাতির ভেড়া পালনে উন্নত প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি। যদি কেউ বাণিজ্যিকভাবে এ ভেড়া পালনে এগিয়ে আসেন তাহলে তার তেমন কোনো মূলধন বা বড় কোনো অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর