শিরোনাম
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কী আছে যুবক-এর ভাগ্যে?

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কী আছে যুবক-এর ভাগ্যে?

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানি যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক)-এর ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে শিগগিরই। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে এর স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে তা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক অভিমত রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করার দায়িত্ব কার, সে বিষয়ে ঝামেলা বেধেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। এর আগে তারা যুবক-এর বিষয়ে দুটি কমিশনও গঠন করেছিল। আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বলে মত দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামীকাল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

২০১০ সালে তখনকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে ‘যুবক’ বিষয়ে যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল, সেই কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতারণার মাধ্যমে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। এই অর্থ নেওয়া  হয় ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে। এ অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে ও সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ২০১৩ সালে যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে সাবেক যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ‘যুবক কমিশন’। এরপর থেকেই প্রশাসক নিয়োগে চিঠি চালাচালি ও একের পর এক সভা করে চলেছে অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগের আলোচনা হলেও আপাতত তা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মকর্তারা জানান, যুবক-এর সম্পত্তি সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ফলে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে ওই সম্পদ নিজ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেওয়ার মতো আইনি কাঠামো নেই আরজেএসসি’র। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো অফিসও নেই। সূত্রগুলো জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলেও যুবক-এ সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রশাসক নিয়োগ সম্ভব হবে না। এ জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করতে হবে। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত প্রশাসক নিয়োগের আদেশ ও ওই আদেশ বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আর কোনো ঝামেলা থাকবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুবক-এ প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত রয়েছে। তবে এটি কীভাবে কোন সংস্থার মাধ্যমে হবে সেটি চূড়ান্ত করতে হবে। আশা করছি, সোমবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) সভায় যুবক বিষয়ে একটি দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে আইন মন্ত্রণালয় যুবক-এ প্রশাসক নিয়োগের পক্ষে মত দেয়। এতে বলা হয়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানিটিতে প্রশাসক/রিসিভার নিয়োগ অথবা সরকার যেরকম মনে করে, সে অনুযায়ী (যুবক)-এর স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ওপর কর্তৃত্ব জারি করতে পারবে। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ২০১৫ সালের মার্চে যুবকে প্রশাসক নিয়োগ ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত এমএলএম কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দিতে একটি বিচারিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত কমিশনের নেতৃত্বে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ ধরনের মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর গত এপ্রিলে যুবক-এর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় জানতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সারসংক্ষেপে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এর জবাবে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই সময় বাজেট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনার সময় বের করতে পারেননি বলে জানা গেছে। শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর যুবক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) আত্মপ্রকাশ। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি সোসাইটিজ অ্যাক্টের আওতায় নিবন্ধন নেয়। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক তদন্তে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা বেরিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে যুবকের মাধ্যমে প্রতারিত গ্রাহকের অর্থের পরিমাণ জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। ওই তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালের মে মাসে সাবেক যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় যুবক-বিষয়ক স্থায়ী কমিশন। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল যুবকের সম্পদ আয়ত্তে নিয়ে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেটি করতে সমর্থ হয়নি কমিশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর