রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
টাম্পাকো ট্র্যাজেডি

ধ্বংসস্তূপে এখনো চলছে উদ্ধার কাজ

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ধ্বংসস্তূপ ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে। এদিকে কারখানা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।

ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ৩০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনজনের মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকেই স্বজনরা নিয়ে গেছেন। বাকি একজনের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। নিহতদের  মধ্যে অধিকাংশই সিলেটবাসী। গতকাল কোনো লাশ উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকর্মীরা। সেনাসদস্য ও পুলিশ কারখানার চারপাশ ঘিরে রেখেছে। কারখানার পূর্ব-পশ্চিমে শাখা সড়কে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ঘটনাস্থলে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ঘটনায় আহত শ্রমিকরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে এসে নাম নিবন্ধন করান। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত ১৫ জনকে ১০ হাজার টাকা এবং নিহত দুজনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনরা সূর্য ওঠার আগেই কারখানার পাশে এসে হাজির হচ্ছেন। কখন স্বজনকে ফিরে পাবেন সে অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে এ অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন কারখানার শ্রমিকরা। তারা কারখানা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সকালে টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়ালসেতুর নিচে রেলগেট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় শত শত শ্রমিক কালো ব্যাজ ধারণ করে বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানার হাতে নিয়ে ‘মালিক বাঁচলে আমরা বাঁচব, ট্যাম্পাকোর পরিবার বাঁচাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই’ এমন স্লোগান দেন। তারা এমনকি ট্যাম্পাকো কারখানা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শ্রমিক সামিউল হোসাইন, মিজান, আক্তারুজ্জামান, শিপনসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের মালিকের বিরুদ্ধে করা “মিথ্যা” মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। গ্যাস রাইজার বিস্ফোরণ হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বয়লার বিস্ফোরণ হয়নি। আমাদের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিকম মতি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন।’

এদিকে তিতাস গ্যাস টঙ্গী জোন ম্যানেজার অজিত চন্দ্র দেব বলেন, গ্যাস রাইজার বিস্ফোরণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মিথ্যা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) মো. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিসিক কার্যালয়ের পাশে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। এখান থেকে হতাহতদের নামের নিবন্ধন এবং বিভিন্ন তথ্য স্বজন ও আহতদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের সহ-পরিচালক মো. নূর ইসলাম বলেন, ধ্বংসস্তূপ ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে। গতকাল পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছেন। তবে কবে নাগাদ এ উদ্ধারকাজ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘আমি একটু সময় পেলেই ছুটে আসি ঘটনাস্থলে। এসে উদ্ধারকর্মীদের এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিই। আমি মনে করি, গাজীপুরে এত বড় দুর্ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। এ ঘটনার খবরে শুধু টঙ্গী, গাজীপুর নয়, সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

সর্বশেষ খবর