সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১৪ দলে অসন্তোষ, অস্তিত্বহীন ২০ দল

জোটের রাজনীতি ভোটের রাজনীতি রংপুর

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

১৪ দলে অসন্তোষ, অস্তিত্বহীন ২০ দল

রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট শুধুই কাগজে-কলমে। ১৪-দলীয় জোটের ১০ দল এবং ২০-দলীয় জোটের ১৬ দলেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। কমিটি থাকলেও সভা হয় না দীর্ঘদিন। শরিক দলের সঙ্গে সমন্বয় নেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে জোটগতভাবে প্রার্থীও দিতে পারেনি কেউ। সমন্বয়হীনতা এবং শরিক দলের নেতাদের মূল্যায়ন না করায় ১৪ দলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে ২০-দলীয় জোট।

চরম অসন্তোষ ১৪ দলে : রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়হীনতা ও শরিক দলের নেতাদের মূল্যায়ন না করাকে কেন্দ্র করে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে রংপুর ১৪ দলে। শরিক দলের নেতারা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেন শরিক দলের নেতা-কর্মীরা। আর মধু খান আওয়ামী লীগ নেতারা। আর আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলছেন, এটা নেতৃত্বের ব্যর্থতা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত রংপুরে জোটের মাত্র তিনটি সভা হয়েছে। শরিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সমন্বয় নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের। জোটের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের বেলায় কেবল শরিকদের ডাক পড়ে।

উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রার্থী দিতে পারেনি ১৪ দল। উল্টো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাসদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ভোটের রাজনীতিতে শরিকদের কোনোভাবে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ।

১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় কমিটি যখন কর্মসূচি দেয় তখনই রংপুর কমিটি একটু নড়েচড়ে বসে। এরপর স্থানীয়ভাবে রাজনীতিকে আর সক্রিয় হতে দেখা যায় না। সরকার ১৪-দলীয় হলেও সরকারি কর্মকাণ্ডে শরিকদের ডাকা হয় না। ফলে শরিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও নির্লিপ্ততা আছে।

১৪ দলের জেলা সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জেলা পরিষদ প্রশাসক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৪ দলের মধ্যে ১০ দলেরই অস্তিত্ব নেই রংপুরে। জোটের কর্মসূচিতে ডাকলে শরিকরা আসে, না ডাকলে আসে না। তাদের আগ্রহ নেই। তারা জামাই আদর খোঁজে। এভাবে তো  চলে না। দেশপ্রেম থাকতে হবে। জেলা-উপজেলায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির কর্মসূচিতে শরিক দলের অনেককেই খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে জোটের স্বার্থে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা ভুলে ঐক্য মজবুত করার আহ্বান জানান তিনি।

অস্তিত্বহীন ২০-দলীয় জোট : রংপুরে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ২০ দলের মধ্যে ১৬ দলেরই অস্তিত্ব নেই এখানে। কাগজে-কলমে কমিটি থাকলেও চার বছর ধরে জোটের কর্মকাণ্ড নেই। সভাও হয় না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। এরপর জোটের নেতারা এক টেবিলে বসতে পারেননি। ভোটের রাজনীতিতেও জোটগত অংশগ্রহণ নেই। দশম সংসদ নির্বাচনে ২০-দলীয় জোট অংশ নেয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয় তারা। তবে রংপুরে এসব নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রার্থী দিতে পারেনি। বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে ফল খুব একটা ভালো করতে পারেনি। জেলার ৭৬টি ইউপির মধ্যে দুটিতে এবং আট উপজেলা পরিষদের দুটিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীই দিতে পারেনি তারা। আর তিন পৌরসভা নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছেন দলটির মেয়র প্রার্থীরা। এর মধ্যে পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ পৌরসভায় জামানত হারাতে হয়েছে প্রার্থীদের। জেলা ২০-দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন বলেন, ২০ দলের মধ্যে চার দলের অস্তিত্ব আছে। জোটও আছে। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়, তখন থেকেই মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতারের ভয়ে নেতারা এখনো বাড়িতে থাকতে পারছেন না। শরিক দল জামায়াতের অবস্থা আরও খারাপ। এর পরও বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার কারণে মাঠে নামা যাচ্ছে না। ফলে জোটগতভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।

জোটে আছে ভোটে নেই বাম জোট : আট দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট বাম মোর্চার রংপুরে পাঁচ দলেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ সমন্বয়ে রয়েছে আরেকটি জোট। দুই জোটই বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বছরজুড়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছে। একটা না একটা ইস্যু নিয়ে সভা সমাবেশ মিছিল করছেন দুই জোটের নেতা-কর্মীরা। তবে ভোটের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নয় এ দুটি জোট। বাম মোর্চার জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, রাজনীতির মাঠে তত্পর থাকলেও শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়া হয়। তবে তা কখনো দৃশ্যমান, কখনো দৃশ্যমান হয় না। জেলা বাসদের সমন্বয়কারী কমরেড আবদুল কুদ্দুস বলেন, মাঠে তত্পর থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো শক্তি এখনো সঞ্চয় করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর পরও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি নিজেই মেয়র প্রার্থী হয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেওয়া হলেও উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর