শিরোনাম
সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্মাটকার্ড বিতরণ নিয়ে জটিলতার শঙ্কা

গোলাম রাব্বানী

স্মাটকার্ড বিতরণ নিয়ে জটিলতার শঙ্কা

স্মার্টকার্ড বিতরণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। কার্ড বিতরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে ভোটার তালিকা প্রকল্প ও ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই বললেই চলে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য কাগজ-কলমে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও ২০টি উপ-কমিটি করা হলেও কমিটির সদস্যরা তাদের কাজের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। এ ছাড়া বিতরণ কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি ইসি। এমনকি গতকাল সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সমন্বয় কমিটি’র বৈঠকে এসব বিষয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বৈঠকে সচিব একাধিক কর্মকর্তার কাছে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেছেন, যে কমিটিতে তাদের নাম রয়েছে, সেই কমিটির কাজ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। শুধু কাগজে-কলমে কমিটিতে রয়েছেন। এ ছাড়া সভায় ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঢাকার  থানা কর্মকর্তারা কার্ড বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটা হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কার্ড বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন হবে ২ অক্টোবর। এরপরে ৩ অক্টোবর থেকে তা ঢাকা ও কুড়িগ্রামের রৌমারীর একটি চরে ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে কার্ড বিতরণ করা হবে, সেই কর্মপরিকল্পনার কথা এখনো জানে না ইসির মাঠ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কার্ড বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। শত শত মানুষ কার্ডের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন। তখন একজন নাগরিকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি, পুরাতন কার্ড জমা নেওয়ার এবং নতুন কার্ড খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এই কার্ড নিতে এলে নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তখন এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও লাগবে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকল্পের কর্মকর্তা এসব বিষয়ে নিয়ে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ও করছে না। ঢাকার একজন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কার্ড বিতরণ নিয়ে মাত্র একদিন বৈঠক হয়েছে। আমাদের একটা পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকল্প থেকে কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। অপর এক থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, হঠাৎ করে লাইনে যখন শত শত লোক কার্ড নিতে দাঁড়াবে, তখন কী হবে? একটা কার্ড খুঁজে পেতেই অনেক সময় লাগবে। আবার নাগরিকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি, পুরাতন কার্ড জমা নেওয়ার ব্যাপার তো রয়েছেই। সব মিলে কার্ড বিতরণ নিয়ে এখনেই সঠিক পরিকল্পনা হাতে না নিলে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়তে হবে থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের। প্রথমে ঢাকা ও কুড়িগ্রামের রৌমারীর একটি চরে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র ‘স্মার্টকার্ড’ বিতরণ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পরদিন থেকে ঢাকা ও চরের নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এই কার্ড।  আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে ইসির চুক্তি রয়েছে।

ভোটারদের হাতে থাকা লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রে রঙিন ছবি থাকলেও ‘উন্নতমানের’ স্মার্টকার্ডে দেখা যাবে সাদা-কালো ছবি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বলছে, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্ডে দৃশ্যমান ছবি সাদা-কালোই হবে। তবে কার্ডে যুক্ত মেমোরি চিপে রঙিন ছবি থাকবে।

 ১০ বছর মেয়াদি এ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র আগামী ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগর ও কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিতরণ শুরু হবে। তার আগের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউনিক পরিচিতি নম্বর, হলোগ্রামযুক্ত, মেমোরি চিপ ও বারকোডসহ আন্তর্জাতিক মানের এ জাতীয় পরিচয়পত্রে নাগরিকের সাদা-কালো ছবি থাকবে। স্মার্টকার্ডের এক পিঠে ভোটারের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, স্বাক্ষর এবং অপর পিঠে ঠিকানা, ব্লাড গ্রুপ এবং ইস্যুর তারিখ দেওয়া থাকবে। এ ছাড়া থাকবে ছবি, মোমোরি চিপ, বারকোডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ফিচার, যা জালিয়াতি করা কঠিন হবে বলে ইসির দাবি।

সর্বশেষ খবর