সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বস্ত্রকলে আলো দেখছে সরকার

বন্ধ মেশিন চালু করতে কমিটি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বস্ত্রকলে আলো দেখছে সরকার

ঋণ আর লোকসানের বোঝা নিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা অথবা আংশিক চালু অবস্থায় থাকা বস্ত্রকলগুলোকে আবারও পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উদ্দেশ্য—এসব কল-কারখানার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় বাড়ানো এবং উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বেকার ও নতুন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর সমস্যা সমাধান করে সেগুলো দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে। যাতে সরকারের লোকসান কমার পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা লাভবান হয়।

সূত্রগুলো জানায়, এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিকভাবে ওই মিলগুলোর সংকট কাটিয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর উদ্যোগ নেবে। গত ৩১ আগস্ট গঠিত কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বেসরকারিকরণ ও বিরাষ্ট্রীয়করণ শাখা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষা করতেই প্রধানমন্ত্রী চান বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে। তাই বন্ধ বস্ত্রকলগুলোর সমস্যা সমাধান করে কীভাবে পরিপূর্ণভাবে চালু করা যায় সে লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব মিল শ্রমিক-কর্মচারীদের মালিকানাতেই থাকবে। আমরা সেগুলো ফিরিয়ে নিচ্ছি না। তবে মিলগুলোর সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, মানবেতর জীবনযাপন করা শ্রমিকদের আয় বাড়াতে ২০০১ সালে বিটিএমসির নয়টি মিল শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। এরই মধ্যে কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তিনটি মিল। এসব মিলের খরচ চালাতে গিয়ে বছর বছর ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ওই সময় যে উদ্দেশ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ বিবেচনায় বস্ত্রকলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পূরণ হয়নি। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, বর্তমানে বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন মোট ১৮টি মিলের মধ্যে ছয়টি মিল সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু আছে, দুটি মিল (খুলনা টেক্সটাইল ও চিত্তরঞ্জন কটন মিল)-এ টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। এক দশক আগে মিলগুলোয় বছরে প্রায় ৮০ লাখ কেজি সুতা উৎপাদন হতো, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেটি কমে ১৬ লাখ কেজিতে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সারোয়ার গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে জানান, আমাদের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণে মোট ১৮টি বস্ত্রকলের মধ্যে সাতটি মিল চালু আছে। অন্যগুলোর মধ্যে নয়টি মিলের সাময়িক উৎপাদন বন্ধ আছে। তিনি বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া মিলগুলোতে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা দেখবো যে উদ্দেশ্যে মিলগুলো দেওয়া হয়েছিল সে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে কি-না। মিলগুলো চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বন্ধ থাকা মিলগুলো চালু করতে প্রাথমিকভাবে ওইসব মিলের ঋণের বোঝা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যাংক ঋণ ছাড়াও এসব মিলের কাছে বিটিএমসিরও পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সরকার কর্তৃক পরিশোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া বস্ত্রকলগুলোর আওতায় অনেক অব্যবহূত জমি রয়েছে। ওই জমি যাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বস্ত্র সহায়ক শিল্প স্থাপনে অনুমতি দেওয়া যায় সেই পরিকল্পনাও রয়েছে। কয়েকটি মিলের কিছু শেয়ার রয়েছে যা বণ্টন করা হয়নি। অবণ্টনকৃত শেয়ার আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়ার শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনায় দেওয়া মিলগুলোর মধ্যে বিক্রীত তিনটি মিল ক্যারিলিন সিল্ক মিল, পাইলন সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ও লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল কী প্রক্রিয়ায় বিক্রি করে দেওয়া হলো সেটি যাচাই করে তা আবারও বিটিএমসির অধীনে চালু করা যায় কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর