সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাম্পাকো মালিকের বিরুদ্ধে আরও এক হত্যা মামলা

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। টঙ্গী মডেল থানার পুলিশ বাদী হয়ে শনিবার রাতে কারখানার মালিক মকবুল হোসেন লেচু মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে।

এদিকে  ধ্বংসস্তূপ ভবনের উদ্ধারকাজ অব্যাহত রেখেছেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। ঈদের আগ মুহূর্তে শনিবার ভোরে আগুন লাগার পর সোমবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। ঘটনাস্থল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে গতকাল পর্যন্ত আর কোনো লাশের সন্ধান মেলেনি। কারখানার ভিতর কেমিক্যাল থাকায় সতর্কাবস্থায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ধ্বংসস্তূপের বর্জ্য অপসারণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, শ্রম মন্ত্রণালয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঘটনার দিন থেকে ৯ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে টাম্পাকো কারখানার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ বের করতে পারেনি কেউ। কেউ বলছে বয়লার বিস্ফোরণ, আবার কেউ বলছে গ্যাস রাইজার বিস্ফোরণ, এমনকি কারখানা কর্তৃপক্ষের অবৈধ গ্যাসলাইনে লিকেজ থাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলেও বলছে কেউ কেউ। তবে আসলে কোন কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এখনো তা পরিষ্কার হয়নি। অন্যদিকে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনার সুস্পষ্ট তদন্ত না হতেই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। হতাহতের ঘটনায় টঙ্গী মডেল থানার এসআই অজয় চক্রবর্তী বাদী হয়ে শনিবার রাতে কারখানার মালিক মকবুল হোসেন লেচু মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মুকুল হোসেন, আদিবা পারভীন, জামাই শফি সামী, তানভীর হোসেন, সফিকুর রহমান, মনির হোসেন, সমির আহমেদ, আল আমিন ও মো. হানিফ। এর আগে এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের বাবা আবদুল কাদের পাটোয়ারী বাদী হয়ে কারখানার মালিক মকবুল হোসেন লেচু মিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ একের পর এক হত্যা মামলা দিয়ে শ্রমিকদের মালিকপক্ষের কাছ দূরে সরিয়ে রাখার পাঁয়তারা করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা। গতকালও ধ্বংসস্তূপের পাশে আহাজারি করতে দেখা গেছে নিখোঁজদের স্বজনদের। নিহতদের লাশ উদ্ধার ও ধ্বংসস্তূপের বর্জ্য অপসারণে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন। ধ্বংসস্তূপের আশপাশের সব কটি প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ এলাকায় জনসাধারণকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

টাম্পাকোয় নিহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকাসহ ৮ দফা দাবি ৭ সংগঠনের : টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত, নিখোঁজ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশসহ আট দফা দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের সাতটি ফেডারেশন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কালোপতাকা নিয়ে শোকরালি ও সমাবেশে ফেডারেশনের নেতারা এ আহ্বান জানান। সংগঠনগুলো হচ্ছে— জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এবং একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। বক্তারা বলেন, মালিকের অবহেলায় দীর্ঘদিন কারখানায় পুরনো মেশিন ব্যবহার ও ওভারহোলিং না করায় টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে এ যাবত ৩৪ জন নিহত, ১০ জন নিখোঁজ ও শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। বয়লার বিস্ফোরণ ও গ্যাসের কারণে এ দুর্ঘটনার জন্য মালিকের গাফিলতিই দায়ী।

সর্বশেষ খবর