সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পিতা-মাতার ঘাতক সন্তান বাড়ছে উৎকণ্ঠা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

‘ঘাতকে’ পরিণত হয়েছে সন্তানরা। পারিবারিক কলহ এবং অর্থনৈতিক বিরোধ নিয়ে চট্টগ্রামে একের পর এক সন্তানের হাতে খুন হচ্ছেন মা-বাবা। গত তিন দিনে চট্টগ্রামে সন্তানের হাতে খুন হয়েছেন দুজন মা-বাবা। একইভাবে গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয় ও মানসিক বিষণ্নতা দূর করা না গেলে এবং পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় না হলে বাড়তেই থাকবে এ ধরনের খুন। পুলিশও বলছে, এসব পারিবারিক খুন রোধ করা সম্ভব নয়। তাই সবাই সামাজিক সচেতনতা  বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন। এভাবে খুনের ঘটনা বাড়তে থাকায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের অভিভাবক মহল। সমাজবিজ্ঞানী ড. গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘অতিমাত্রায় আধুনিকতার প্রতি আগ্রহী হওয়ায় মানুষের মধ্যে সামাজিক এবং পারিবারিক আদর্শ লোপ পাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। ফলে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা কমছে। আদর্শহীন ও রংচঙে আবহের কারণে ঘটছে নৈতিক অবক্ষয়। এতে করে পিতা-মাতাকে খুন করতে দ্বিধা করছে না সন্তানরা। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে মেনে চলতে হবে সামাজিক অনুশাসন এবং সুদৃঢ় করতে হবে পারিবারিক বন্ধন।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও সমাজসেবক জামাল হোসেন বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার জন্য শেষ ভরসাস্থল হয় সন্তান। কিন্তু সেই সন্তান যদি বাবা-মার ঘাতক হয়ে উঠে তা হয় সমাজ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত।’ জানা যায়, ১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানাধীন গোসাইভাঙ্গা এলাকায় ‘মনে কষ্ট’ দেওয়ার জন্য মা কুমকুম চৌধুরীকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে সুমিত চৌধুরী। ১৬ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীর মেখল ইউনিয়নে পিতা মো. মুছাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে মোহাম্মদ তারেক। পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ১ এপ্রিল নগরীর কর্ণফুলী থানা শাহমিরপুর এলাকায় ছেলে মনির উদ্দিনের পাথরের আঘাতে মারা যান পিতা আলী আকবর মুন্সি। গত বছরের ১৩ অক্টোবর টাকা চেয়ে না পেয়ে বৃদ্ধ মা রওশন আক্তারকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে ছেলে জহিরুল হক। অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক এবং বিকৃত মানসিকতার জন্য সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুনের মতো ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নৈতিকতার চরম বিপর্যয়ের ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। এতে করে তুচ্ছ ঘটনার কারণে প্রিয়জনকে খুন করতে দ্বিধা করছে না।’ এসব খুনের ঘটনা আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য। বলেন, ‘পারিবারিক অপরাধ প্রতিরোধ করতে সমাজ সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। সামাজিক সচেতনতাই পারে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে।’

সর্বশেষ খবর