মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাওরপাড়ে সুখের হাসি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

হাওরপাড়ে সুখের হাসি

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা হাওর পাড়ের মানুষগুলোর জীবনযাত্রাও। বদলে যাচ্ছে তাদের পেশা। সরকারের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রচেষ্টায় পাহাড়বেষ্টিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাওর এলাকায় এখন বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। সরেজমিন হাওর এলাকায় দেখা গেছে, এক সময় হাওর পাড়ের যে মানুষগুলো রাত-দিন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত, আজ তাদের কেউ সবজি, কেউ মাছ চাষ, হাঁস পালন, মোবাইল সার্ভিসিং এবং কেউ হাতে বুননের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।  এতে করে তারা শুধু স্বাবলম্বীই নয়, তারা মহাসুখীও। জানা গেছে, ইউএসএইডের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা  সিএনআরএস কর্তৃক বাস্তবায়িত তাদের ক্রেল প্রকল্পের আওতায়  শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাওরের ওপর নির্ভরশীলদের একটি তালিকা করা হয়। এ তালিকা অনুযায়ী গত চার বছরে তারা হাইল হাওর এলাকার ২৮টি গ্রামের ১ হাজার ৩৮৯ জনকে (পুরুষ ৬৪৬  মহিলা ৭৪৩) বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের মধ্যে ৪৪০ জনকে উন্নত পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ৫১৬ জনকে হাঁস-মুরগি পালনে, ২৭৮ জনকে মাছ চাষে, চারজনকে মোবাইল সার্ভিসিংয়ে, ১৫ জনকে স্থানীয় সেবাদানকারী (চাষিদের বিভিন্ন উপাদান ও পরামর্শ প্রদান), ১ জনকে মাছের হ্যাচারি, ১০০ জন মহিলাকে হাতে বুনন ও ২৫ জনকে পোলট্রি ব্যবসায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর থেকে হাওর তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো বিকল্প পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে ৪৩০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করছে। মাছের চাষ করছেন ১৭৪ জন। হাঁস-মুরগি পালন করছে ৪০০ পরিবার। ১০০ জন মহিলা হাতে পুতুল বানাচ্ছেন। আর  চারজন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা করছেন। মির্জাপুরের কাশিপুর প্রামের জলবায়ু সহিষ্ণু সবজি চাষি আজগর আলী জানান, ক্রেল প্রকল্প অনুযায়ী তাকে সবজি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত বীজ ও উপকরণ দেওয়া হয়। তিনি এগুলো চাষ করে এই বর্ষা মৌসুমে অনেক লাভবান হয়েছেন। একই গ্রামের লামাপাড়ার আলী আকবর জানান, তাদের পরিবার আগে হাওরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মির্জাপুর বাজারে দোকান দিয়ে মাসে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। বর্তমানে তিনি সুখী ও স্বাবলম্বী। হাওর এলাকায় কর্মরত ক্রেল (ক্লাইমেট রিজিলিয়ান ইকো সিস্টেম অ্যান্ড লাভলিহুড) প্রকল্পের কমিউনিকেশন অফিসার ইলিয়াস মাহমুদ পলাশ বলেন, ‘কারও একার পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ মিলেই একটি দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা মূলত হাওর এলাকার গ্রামগুলোর মানুষকে সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে তাদের বিকল্প জীবিকায়নের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এতে করে সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বহুমুখী জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছে। বিকল্প পেশায় গিয়ে ওই সব পরিবারগুলোর মধ্যেও স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে। আর এই স্বল্পসংখ্যক লোককে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে আমরা দেশের মূল উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর