মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নোভা-বাদশার বিয়ের সানাই বাজবে কাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

এবার সানাই বাজাবে সিংহী নোভা ও সিংহ বাদশার বিয়ের। কাটা হবে কেক। তৈরি হচ্ছে নান্দনিক ফটক। দুইজনকে রাখা হবে এক ঘরে। সিংহী নোভার অবসান ঘটবে একযুগের ‘নির্জন’ জীবনের। নতুন সঙ্গিনী পাবে বাদশা। নোভার জন্য বাদশা এসেছে রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে। আগামীকাল দুপুরে তাদের বিয়ে। বিয়েতে থাকছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। আমন্ত্রিত অতিথি তিন শতাধিক। যার বেশির ভাগই গণমাধ্যম কর্মী। 

জানা যায়, ৫ সেপ্টেম্বর বর হিসেবে রংপুর থেকে চট্টগ্রাম আনা হয় বাদশাকে। ডেপুটি কিউরেটর মনজুর মোরশেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম বাদশাকে দুটি লোহার খাঁচায় ট্রাকে চড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন।

পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এবং দুটি সিংহ যাতে মারামারি না করে সে জন্য পৃথক খাঁচায় পাশাপাশি রাখা হয়। ওই ভ্রমণের ক্লান্তি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাদশা। তারপরও পাশাপাশি দুটি খাঁচায় কনে নোভার সঙ্গে ভাব বিনিময় করে আসছিল। পাশাপাশি দর্শকদের আনন্দও দিয়েছে বেশ। জানা যায়, বাদশাকে প্রতিদিন পাঁচকেজি মুরগির মাংস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে এখনো সর্বোচ্চ চার কেজি পর্যন্ত খেতে পারছে। সঙ্গত কারণেই এখনো গরুর মাংস দেওয়া হয়নি। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নৈসর্গিক পরিবেশের সঙ্গে সে দারুণ মানিয়ে নিয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছিল সিংহ শাবক বর্ষা ও নোভা। দুই বোনের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। এরপর আর কোনো নতুন সিংহ চিড়িয়াখানায় আনা হয়নি। একই সঙ্গে চিড়িয়াখানায় কোনো পুরুষ সিংহ না থাকায় ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’ কুমারী থেকে যায়। তাদের ঘর-সংসার করাও হয়ে ওঠেনি। এতদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও উপযুক্ত পুরুষ সিংহ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংবাদপত্রের মাধ্যমে রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ সিংহ থাকার খবর পায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর বর্ষা ও নোভার মধ্য থেকে একটি রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে অদল-বদল করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়। যার সুবাদে বর্ষাকে গত ২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ‘রাজা’র সঙ্গী হবে বর্ষা। চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, নোভা-বাদশার বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ। তাদের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে কেক। তৈরি হচ্ছে ফটক। দাওয়াত দেওয়া হয়েছে বিশিষ্টজনদের। তৈরি করা হয়েছে পৃথক একটি কক্ষ। যেখানে বাসরঘর হবে। আগামীকাল তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিক সানাই বাজাবে। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এটি তত্ত্বাবধান করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বর্তমানে ৬৫ প্রজাতির ৩৬৫টি প্রাণী আছে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির পাখি ও ৩৩ প্রজাতির প্রাণী। এরমধ্যে দুটি সিংহী, একটি ভালুক, ১৮টি বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, ছোট-বড় ৩৪টি কুমির, ১১টি অজগর, তিনটি চিতা বিড়াল, মেছো বিড়াল, কাছিম, বানর ও বাগডাশ অন্যতম। তা ছাড়াও আছে ধনেশ, টিয়া, ময়না, বক, হাঁস, চিলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। ১৮টি হরিণের মধ্যে আছে একটি প্যারা, চারটি মায়া, চারটি সাম্বার ও নয়টি চিত্রা হরিণ। বানর প্রজাতির মধ্যে আছে হনুমান, রেসাস ও উল্টা লেজি। তবে চিড়িয়াখানায় বর্তমানে কোনো বাঘ নেই। ২০০৬ সালে মারা যায় বাঘ ‘চন্দ্র’।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার শেষ বাঘ ‘পূর্ণিমা’ মারা যায় ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর।

সর্বশেষ খবর