বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
টাম্পাকো ট্র্যাজেডি

আরও একজনের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে এখনো লাশের সন্ধান

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় ভয়াবহ আগুনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনো চলছে উদ্ধারকাজ। স্বজনদের কয়েকজনকে লাশের সন্ধান করতে দেখা গেছে। গতকাল ছিল উদ্ধারকাজের নবম দিন। ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনীর সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করে। এ ছাড়া ১১ জন নিখোঁজ এবং আহত হয়েছেন ৩৫ জন। গতকালও কোনো লাশ উদ্ধার হয়নি। সেনাসদস্য ও পুলিশ কারখানার চারপাশ ঘিরে রেখে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার টন বর্জ্য সরানো হয়েছে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে। তবে থামেনি নিখোঁজ স্বজনদের আহাজারি। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে নিখোঁজদের খোঁজে আহাজারি করতে দেখা গেছে। কারখানার পাশে নিহত মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের কী বুঝ দেব। ওরা শুধু ওর বাবার কথা বলে। আমি এখন কই পাব ওর বাবাকে। ওদের বাবা তো চিরদিনের জন্য চলে গেছে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। একটু পরপর ছোট মেয়েটা আর ছেলেটা বলে, মা বাবা এখনো কেন আসে না। আমরা বাবার কাছে যাব। আমি কই গেলে পাব ওদের বাবাকে। আমি কীভাবে ওদের বুঝ দেব। ও আল্লাহ কি কঠিন পরীক্ষায় আমাকে ফালাইলা। নিমিষেই আমাদের সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল।’ এদিকে স্থানীয় এমপি মো. জাহিদ আহসান রাসেল নিখোঁজ ১০ পরিবারকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ২০ জনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহত ২৫ জনের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। যারা অনুদান পাননি তারা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে নাম নিবন্ধন অব্যাহত রেখেছেন। আহত এক শ্রমিক আ. মোমিন মিশু বলেন, ঘটনার পূর্বে আমরা কারখানার মূল ফটক দিয়ে কারখানায় ঢোকার সময় গ্যাস লিকেজ হয়ে শোঁ শোঁ শব্দ শোনা গেছে। এর কিছুক্ষণ পরই বয়লারে সংযোগ গ্যাসলাইন বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ধ্বংসস্তূপ ভবনের উদ্ধারকাজ এগিয়ে চলছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের ভিতর থেকে ১৪২টি কেমিক্যাল ড্রাম উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু : টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণে আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম হোসেন আহমেদ রাসেল (২৬)। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জের গাগুয়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে। গতকাল বিকালে ঢাকার ধানমন্ডির জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হোসেন আহমেদ রাসেলের মৃত্যু হয়। রাতে তার বাবার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হলো।

এ ব্যাপারে ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসান বলেন, দ্রুত উদ্ধারকাজ চলছে, যেখানে লাশ থাকার কথা আমরা সেখানেই গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে কবে নাগাদ এই উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।

সর্বশেষ খবর