এসএসসি ও দাখিল এবং এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রবর্তিত নতুন নম্বর বিন্যাস নিয়ে বিপত্তি বেধেছে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছেন।
জানা গেছে, এসএসসি ও দাখিল এবং এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীদের জন্য আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সম্প্রতি নতুন নম্বর বিন্যাস প্রবর্তন করেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ নম্বর বিন্যাস ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে সৃজনশীলে (লিখিত) ১০ নম্বর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বাড়তি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর তারা লিখতে চান না। এদিকে আসন্ন অক্টোবর মাসে দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই মধ্যে সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে স্কুলগুলো। কিন্তু হঠাৎ করে নম্বর বিন্যাসের নতুন নির্দেশনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মতো বিপাকে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। জানা গেছে, অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ আগের নম্বর বিন্যাস ধরে টেস্ট পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে এখনো সরে আসেনি। কেউ কেউ বলছেন, নতুন নম্বর বণ্টনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্কুল-কলেজগুলোতে কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি, তাই আগের নম্বর বিন্যাস অনুযায়ী টেস্ট পরীক্ষা নিতে সমস্যা নেই। তবে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন সব নির্দেশনাই ‘পেপারলেস’। ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশনাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের এসএসসি ও দাখিল এবং এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীদের জন্য ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৩০ মিনিট ও ৭০ নম্বরের সৃজনশীল লিখিত পরীক্ষার জন্য ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বরাদ্দ থাকবে। পূর্বে এমসিকিউ পরীক্ষায় ৪০ ও লিখিত সৃজনশীলে ৬০ নম্বর বরাদ্দ ছিল। প্রবর্তিত নতুন নম্বর বিন্যাস অনুযায়ী যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা রয়েছে সেসব সাবজেক্টের ক্ষেত্রে ২৫ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ২৫ মিনিট ও ৫০ নম্বরের সৃজনশীল পরীক্ষার জন্য ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বরাদ্দ থাকবে। প্রথমে এমসিকিউ ও পরে লিখিত সৃজনশীল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দুই পরীক্ষার মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না।নতুন নম্বর বিন্যাস সম্পর্কে গতকাল আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নতুন নম্বর বণ্টন ও প্রশ্ন ব্যবস্থা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এখন স্কুলের টেস্ট পরীক্ষাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই নিতে হবে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশনা বলবৎ হবে। আসন্ন অক্টোবরে এসএসসি ও সমমানের টেস্ট পরীক্ষা নতুন নম্বরবিন্যাস অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়বে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যেই অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে।
ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ইনছান আলী বলেন, নতুন নম্বরের নিয়মে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সাময়িক সমস্যায় পড়লেও আশা করছি ফাইনাল পরীক্ষায় তা প্রভাব ফেলবে না। আমরা নতুন মানবণ্টনকে আমলে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁসের সমস্যা এড়াতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নতুন নম্বর বিন্যাস পদ্ধতি জারি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ লিখিত পরীক্ষার আগে এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। ২০১৬ সালের এসএসসি ও এইচএসসি থেকে এ পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে। ‘এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে’ এ সমস্যার লাঘব করতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে লিখিত সৃজনশীলে নম্বর বৃদ্ধি করে এমসিকিউ থেকে নম্বর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত বছর ৭ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত একসভায় সৃজনশীল লিখিত পরীক্ষার আগে এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থী মূল্যায়ন আরও যথাযথ করতে এমসিকিউ প্রশ্ন কমানোর সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়।