শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা পর্যায়েও আউটসোর্সিং

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় আউটসোর্সিংয়ে কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। আউটসোর্সের কাজ করার জন্য এখানে স্থাপিত হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরুর মাত্র তিন বছরেই এলাকার তরুণ-তরুণীরা এ কাজে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ফলে প্রতিদিনই বিদেশ থেকে অনলাইনে কাজ আসছে। প্রায় ৪০০ তরুণ-তরুণীর ইতিমধ্যে আউটসোর্সে কর্মসংস্থান হয়েছে। উদ্যোক্তারা ২০১৮ সালের মধ্যে ১ হাজার বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তাদের মতে, ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ সামান্য আউটসোর্সের কাজ করলেও উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের আউটসোর্স এক্সপার্ট লি. (ওইএল) একমাত্র প্রতিষ্ঠান। গাইবান্ধা পৌর এলাকার বাইরে খোলাহাটি ইউনিয়নের কদমতলায় নিজস্ব দৃষ্টিনন্দন ভবনে ওইএল নামের প্রতিষ্ঠান তিন বছর ধরে আউটসোর্সিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ যারা এ প্রতিষ্ঠান দেখতে এসেছেন বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছেন।

পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলে নিভৃত গ্রাম্য পরিবেশে প্রতিষ্ঠানটিতে আউটসোর্সিংয়ের কাজের আয়োজন এবং শত শত তরুণ-তরুণীর কাজ করার দৃশ্য তাদের অবাক করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের তরুণ কর্মীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের ই-কমার্স, ব্রুশিয়র, ক্যাটালগ ডিজাইনের জন্য ফটো এডিটিং, কালার সেপারেশনের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

 

যেভাবে শুরু : ২০১৩ সাল থেকে গাইবান্ধায় ওইএল কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠান স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণকারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর গ্রামের আতিকুর রহমান মোল্লা প্রতিষ্ঠানের সিইও। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি এবং আউটসোর্স নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে নিজ জেলা গাইবান্ধায় একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। কোনো শিল্প-কলকারখানা না থাকায় এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এখানে প্রতিষ্ঠানের প্রোডাকশন সেন্টার গড়ে তুলি। প্রথমে কর্মী সংকট থাকায় বাইরে থেকে কর্মী আনতে হতো। পরে নিজেরাই এলাকার তরুণদের এ কাজের উপযোগী করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলি। ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং মাত্র তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই তরুণরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারছেন।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : ফটো এডিটিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের চাহিদা বিশ্বব্যাপী থাকায় দুই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ওইএল গাইবান্ধায় ‘সারাহ্ ইনস্টিটিউট অব ই-জেনারেশন’ নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে কাজ করে চলেছেন। প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন কলেজ থেকে তারা এইচএসসি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে বেকার ছিলেন। পরে আউটসোর্স ও গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে ঢুকেছেন। তাদের মাসিক বেতন ১০ হাজার থেকে চল্লিশ হাজারের ভিতর। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিভাগের টিম লিডার রিপন মিয়া বলেন, এইচএসসি পাস করার পর বেকার ছিলাম। গ্রাফিক ডিজাইনে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানেই জুনিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজে ঢুকি। এখন টিম লিডার হিসেবে কাজ করছি মাসিক ২৮ হাজার টাকা বেতনে। নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে কাজ সংগ্রহ করে কাজ সম্পাদনের পর আবার তা নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে বিদেশের ক্রেতাদের সরবরাহ করা হয়। মানসম্পন্ন কাজের জন্য ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকার নামিদামি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসেই কাজের অর্ডার বৃদ্ধি করছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আতাউর রহমান সুজন। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করি তাই আমাদের কাজের দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘সারাহ ইনস্টিটিউট অব ই-জেনারেশন’ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রচুর তরুণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ১৫০ যুব নারী আগামী মাসে কাজে যোগ দিতে প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। ২০১৮ সালের মধ্যে নারীসহ ১ হাজার বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস। আইসিটি ডিভিশনের সচিব শ্যামসুন্দর শিকদার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখে এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ বলেন, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্ভরশীল না থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর