রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অন্যরকম

পুতুলকন্যা রূপা ও মিমের বয়স বাড়ে উচ্চতা বাড়ে না

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

পুতুলকন্যা রূপা ও মিমের বয়স বাড়ে উচ্চতা বাড়ে না

২৬ বছরের রূপার উচ্চতা ৩৪ ইঞ্চি আর ১৭ বছরের মিমের ৩৩ ইঞ্চি। খর্বাকার দুই বোনকে এলাকার লোকজন পুতুলকন্যা বলেই চেনে। বয়সে যুবতী হলেও এদের চলাফেরা, আচার-আচরণ সবকিছু শিশুর মতো। খেলাধুলা করে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে। রাতে ঘুমায় মায়ের গলা ধরে। মাঝে মাঝেই দুই বোনকে দেখতে আসে দূর-দূরান্তের মানুষ। এলাকাবাসী মনে করেন, স্বল্প উচ্চতা ও ওজনের জন্য এরা খর্বাকার সহোদর বোন হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ভ্র রেকর্ডে স্থান পেতে পারেন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের রূপা আর মিম কথা বলে যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো করে। বয়স বেড়ে গেলেও এখনো তারা পুতুলকন্যা হিসেবে পরিচিত। পুতুলকন্যা দুই বোনের কারণে তাদের বাড়িটিও এলাকায় পুতুলবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সরেজমিন আঠারোখাদা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, কৃষক আবদুর রশিদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মা ফাতেমা খাতুন গৃহিণী। বড় মেয়ে রূপা (২৬), ছেলে নূর আলম জিকু (২১) ও ছোট মেয়ে মিম (১৭)। নূর আলম জিকুর উচ্চতা স্বাভাবিক হলেও রূপা ও মিম খাটো। একেবারেই খেলনা পুতুলের মতো ছোট। নূর আলম জিকু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। নূর আলম জিকুর লেখাপড়া অব্যাহত থাকলেও শুধু অস্বাভাবিক শারীরিক গড়নের কারণেই দুই বোন রূপা ও মিমের লেখাপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিতেই থেমে গেছে। কৃষক আবদুর রশিদ জানান, ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি করা হলে সহপাঠীরা রূপার শারীরিক গঠনের কারণে তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকত। মিমের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ফলে তাদের লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ছোটবেলায় যখন বোঝা যায় রূপা স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে না, তার চিকিৎসা করানো হয়। কোনো লাভ হয়নি। মিমের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মিমকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠেনি। রূপা ও মিমের মা ফাতেমা খাতুন জানান, ‘জন্মের সময় ওরা খুবই ছোট আকৃতির হয়েছিল। বেঁচে থাকবে এ বিশ্বাস কারোরই ছিল না। ছোট মেয়ে মিমের জন্মের পর নিজের দেশসহ ভারতের অনেক নামিদামি ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ব্যাপারে সবাই নিরাশ করেছেন।’ রূপা খুব অভিমানী। খুব রাগী। বায়নাও ধরে খুব। দিনভর খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। আর মোবাইলে শিল্পী মমতাজের গান শোনে। গানের তালে তালে নাচে। ছোট মিমের রাগ-অভিমান অনেক কম। বাড়িতে এই আছে, এই নেই। খেলতে চলে যায় পাড়ায়। অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করে সে আনন্দ পায়। রূপা ও মিমের খবর জানতে পেরে সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান আলমডাঙ্গার আঠারোখাদা গ্রামে যান রূপাদের বাড়ি। কথা বলেন পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে। গ্রামের সেলিম হোসেন জানান, দুই বোনের বয়স যখন অনেক কম তখন থেকেই তারা তোতাপাখির মতো ছোট ছোট করে কথা বলে। বাড়াদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন জানান, রূপা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। মিমও যাতে পায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস জানান, রূপা ও মিমের চেয়ে উচ্চতায় ছোট মানুষ নেপালে ও ভারতে আছে বলে রেকর্ড আছে। তবে দুই বোন খর্বাকৃতিতে রূপা ও মিম বোধহয় হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট। এ বিষয়ে আমরা দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাব। রূপা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। আগামীতে মিমকেও প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর