সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্থ পাচার-সন্ত্রাসী অর্থায়নে ঝুঁকি কমেছে, শঙ্কা কাটেনি

এপিজির সর্বশেষ মূল্যায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের ১১ মানদণ্ডের তিনটিতে বাংলাদেশের ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্তির ঝুঁকি কমেছে, তবে শঙ্কা কাটেনি আরও ৮টিতে। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং— এপিজির সর্বশেষ মূল্যায়নে এ তথ্য মিলেছে। সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূল করতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতিও দিয়েছে এপিজি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো শহরে এপিজির ১৯তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের তৃতীয় পর্বের মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুমোদন হয়। এই সভায় স্বরাষ্ট্র, আইন, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, দুদক, পুলিশ ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সমন্বয় গড়া বাংলাদেশের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার মতে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঠেকাতে বিশ্ব মানদণ্ডে বাংলাদেশের ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্তির ঝুঁকি কেটে গেছে। এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এপিজির বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে শুল্ক বিভাগের বেশ কিছু পরিপালন আমরা ভালোভাবে তুলে ধরেছি। তবে এপিজির বাকি সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সক্রিয় কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আরও ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর তথ্যমতে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স ও মারণাস্ত্র বিস্তারে অর্থায়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশ ভালো রেটিং পেলেও অন্য আরও কয়েকটিতে রেটিং উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় এই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এপিজির এবারের মূল্যায়নে আরও দুটো ক্ষেত্র (আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন) উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন ঘটার কথা জানিয়ে বিএফআইইউ বলেছে, সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, অর্থ পাচারসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার এপিজির সভায় সব সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। ফলে দুটি ইমিডিয়েট আউটকামের রেটিং উন্নীত করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক চারটি ইমিডিয়েট আউটকামের রেটিং কমানোর প্রস্তাব করলেও তা বিবেচিত হয়নি। ফলে চূড়ান্ত রিপোর্টে বাংলাদেশের রেটিং নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা হতে ভালো অবস্থানে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ হতেও ভালো। জানা গেছে, বাংলাদেশের ওপর প্রথম ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এ মূল্যায়ন শুরু করে, যা ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম-এফএসএপি নামে পরিচিত। ওই সময় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে কার্যক্রম কেবল শুরু হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নন-কমপ্লায়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মূল্যায়ন হয় এপিজির মাধ্যমে। এপিজির ওই প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ফলাফল ভালো না হওয়ায় ২০১০ সালে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে এফএটিএফ আইসিআরজি (ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপ) প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ওই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল রিভিউ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার নির্দেশক একটি পত্র এফএটিএফ-এর প্রেসিডেন্টকে পাঠান। ওই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইনসহ বিভিন্ন বিধিবিধান, প্রজ্ঞাপন, গাইডলাইন প্রণয়ন করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সংস্কার করে। এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ আইসিআরজি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে এপিজির তৃতীয় পর্বের মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়াটি ২০১৪ সালে শুরু হয়। এতে বাংলাদেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কার্যকারিতার মূল্যায়ন হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর