সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছাত্র শীর্ষেন্দুর চিঠির উচ্ছ্বসিত উত্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ছাত্র শীর্ষেন্দুর চিঠির উচ্ছ্বসিত উত্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী

খরস্রোতা পায়রা নদীতে জনসাধারণের চলাচলে জীবনের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানায় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। আর সেই চিঠি পেয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুর কাছে ফিরতি চিঠি প্রেরণ করেছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চিঠিটি স্কুল কর্তৃপক্ষ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষেন্দুর হাতে হস্তান্তর করবে।

শীর্ষেন্দুর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। প্রতিবার বাড়ি যেতে খরস্রোতা ও উত্তাল পায়রা পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় নৌকা কিংবা ট্রলার ডুবে যায়। তাই শীর্ষন্দু প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পায়রা নদীর ওপর একটি ব্রিজ  নির্মাণের আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষেন্দুর লেখা চিঠি পেয়ে আনন্দিত হয়ে উত্তর পাঠিয়েছেন। বিষয়টি তিনি অবগত আছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাই ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিশু শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাস তার চিঠিতে লিখে— ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক। নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস, পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মাতা শীলা রানী সন্নামত। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাস সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আমি আপনার পিতার শৈশবকাল রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি।

আমাদের মির্জাগঞ্জ নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালী জেলার একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়, কখনো ট্রলার ডুবে যায়। এতে আমার থেকে ছোট ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। আমি আমার মা বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে, আপনি মির্জাগঞ্জ নদীতে ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন তা হলে আমাদের জন্য একটু কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন। আজ আর নয়। ইতি, আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক, শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।’ চিঠির উপরের অংশে লেখা রয়েছে পুরান বাজার, পটুয়াখালী। তারিখ ১৫/০৮/২০১৬। চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর দিয়ে উত্তর পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে আনন্দিত হয়েছেন। করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। তিনি লিখেছেন,  ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’ চিঠির জবাবের শেষের দুই লাইনে প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করে শেষ করেন।  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০ সেপ্টেম্বর চিঠিটি স্কুলের ঠিকানায় আসে।

বর্তমানে চিঠিটি তার (প্রধান শিক্ষক) কাছে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আজ জেলা প্রশাসক শীর্ষেন্দুর হাতে চিঠিটি হস্তান্তর করবেন। তবে চিঠি হস্তান্তর করা না হলেও শীর্ষেন্দুর লেখা চিঠির জবাব প্রধানমন্ত্রী তাকে দিয়েছেন তা শিশু শীর্ষেন্দু ও তার অভিভাবকদের অবহিত করেছেন প্রধান শিক্ষক। শীর্ষেন্দুর মা শীলা রানী সন্নামত বলেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের চিঠি পড়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে হাজার হাজার প্রণাম জানাই। আমি খুবই গর্বিত।’ শীর্ষেন্দুর বাবা পটুয়াখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং মা শীলা রানী সন্নামত সমবায় অধিদফতরের জেলা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর