মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার ব্যবসায়ী সংগঠনকে সন্ত্রাসী বললেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তুর্কি-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (টিবিসিসিআই)-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই সংগঠনের সব কার্যক্রম বাংলাদেশে বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেওরিম ওজতুর্ক ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে। চিঠিতে বলা হয়, ফেতুল্লা গুলেন টেররিস্ট অর্গানাইজেশন (ফেটো)-এর সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে টিবিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে। ১৫ জুলাই তুরস্কে যে ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়েছিল এজন্য দেশটির ধর্মীয় নেতা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী ফেতুল্লা গুলেনকে সরাসরি দায়ী করে আসছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি (টিবিসিসিআই) একটি ফেক সংগঠন। সরকারের অনুমোদন না নিয়েই এর কার্যক্রম চলছে। নিয়ম অনুযায়ী যে দেশের সংগঠন সে দেশের অ্যাম্বাসির অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এ ছাড়া এর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সম্পর্কে খারাপ তথ্য পাওয়া গেছে।’ সংগঠনটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে বেশকিছু অনুষ্ঠানের তথ্য ও এ-সংক্রান্ত ছবি পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি ইফতার অনুষ্ঠানের ছবি আপলোড করা হয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনটির ওয়েবসাইটে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ছবির মধ্যে ২০১৪ সালে এ ধরনের একটি ইফতার অনুষ্ঠানের ছবি দেখা গেছে ওয়েবসাইটে যেখানে দেশের রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও ঢাকায় অবস্থিত তুরস্কের তখনকার রাষ্ট্রদূত হোসে মুফতুগলু উপস্থিত ছিলেন। এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টিবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি তিনি জানেন, তবে এটি সরকার অনুমোদিত কিনা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা সে বিষয়টি তিনি অবহিত নন। দুই দেশের নাম নিয়ে গঠিত ব্যবসায়ী সংগঠন টিবিসিসিআইয়ের নাম উল্লেখ করে তুর্কি রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি এ সংগঠনটি তুর্কি সরকারের অনুমোদন ছাড়াই হয়েছে, এমনকি সংগঠনের নামের সঙ্গে দেশের নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয়, এ সংগঠন ফেটোর সহযোগী এবং ১৫ জুলাই সংঘটিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িত। বাণিজ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তুর্কি রাষ্ট্রদূত তার দেশে ঘটে যাওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি আপনাকে এরই মধ্যে অবহিত করেছি, এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ছিল আমার দেশের (তুরস্ক) সাংবিধানিক গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে। এ অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল সামরিক উর্দি পরিহিত কিছু সন্ত্রাসী যারা ফেতুল্লা গুলেনের সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।’ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার এ ধরনের ঘৃণ্য প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্ক যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তার পাশে বাংলাদেশ রয়েছে এমনটি উল্লেখ করে চিঠিতে তুর্কি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে ওই ব্যবসায়ী সংগঠনটির সব কার্যক্রম বন্ধে বাণিজ্যমন্ত্রীর সহায়তা চান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের বিষয়টিকে অত্যন্ত প্রশংসা করে বলেন, ‘তুর্কি সরকারের পক্ষে আমরা এটি নিশ্চিত করছি বাংলাদেশ ও তুরস্কের সহায়তার ক্ষেত্রটি ভবিষ্যতেও অক্ষুণ্ন থাকবে।’

সর্বশেষ খবর