বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অস্ত্র ভেবে আটক পরে দেখল খেলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নয়টি ‘আগ্নেয়াস্ত্র’সহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মান দুই নাগরিককে আটক করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল থেকে তাদের আটক করে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। আটক দুই ব্যক্তি হলেন আমিনুল ইসলাম ও মনির বেন আলী। তারা দুজনই জার্মান পাসপোর্টধারী।

এই দুই জার্মানের দাবি, এগুলো খেলনা পিস্তল, আসল নয়। সিনেমার শুটিং ও পার্টিতে এগুলো ব্যবহূত হয়ে থাকে। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের

একটি অস্ত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের এগুলো আনতে বলেছিল বলে তারা কাস্টমস ও গোয়েন্দাদের কাছে জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিক পরীক্ষার পর গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্নভাবে এগুলো ব্যবহার করা যাবে। পিস্তলের ব্যারেল পরিবর্তন করলেই এগুলো আসল পিস্তলে রূপ পাবে। বুলেট ব্যবহার করে প্রাণহানি করা সম্ভব হবে এই অস্ত্র দিয়ে। এ ছাড়া গ্যাসও ব্যবহার করা যাবে বলে একই সূত্র জানায়। কাস্টমস বলছে, মিথ্যা ঘোষণায় তারা এসব মালামাল ঢাকায় এনেছে। আগ্নেয়াস্ত্র কি না, তা নিশ্চিত হতে ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা হবে। এর পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত। আটক দুই জার্মানকে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মদ রাখা ও ‘অস্ত্রগুলোর’ বিষয়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টম হাউসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্ক্যানিংয়ের সময় আগ্নেয়াস্ত্রসদৃশ বস্তু ও মদের বোতল পাওয়া গেছে ওই দুই ব্যক্তির কাছে। তাদের লাগেজ খুলে জার্মানির ওয়ালথার ব্র্যান্ডের চারটি ও তুরস্কের কোরাকি ব্র্যান্ডের পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রসদৃশ বস্তু এবং ১২টি মদের বোতল পাওয়া যায়। এগুলো বহনের পক্ষে তারা কোনো বৈধ দলিল দেখাতে পারেননি তাই জব্দ করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আটক আগ্নেয়াস্ত্রসদৃশ বস্তু অধিকতর নিশ্চিতকল্পে বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হবে।’ ঢাকা কাস্টম হাউসের উপকমিশনার রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘দুপুরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে ঢাকায় আসেন আমিনুল ইসলাম ও মনির বেন আলী। আগেই গোয়েন্দাতথ্য ছিল মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চোরাচালানের বিশেষ একটি চালান আসছে।

 তাত্ক্ষণিক বিমানবন্দরে আমাদের নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাদের আচরণে সন্দেহ হলে তাদের আটক করা হয়। পরে দুজনের লাগেজ তল্লাশি করে পিস্তলগুলো পাওয়া যায়। পিস্তলগুলোর বিষয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলে এগুলো খেলনা পিস্তল বলে জানান। পরে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো পরীক্ষা করা হয়। তারা প্রাথমিকভাবে জানান, ব্যারেল পরিবর্তন করলেই এগুলো পিস্তলে রূপ নেবে। অন্য কোনো পথে ব্যারেল আনা হয়েছে কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন। ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার এইচ এম আহসানুল কবীর বলেন, তাদের কাছে থাকা একটি কার্টনের ভিতর নয়টি ছোট আগ্নেয়াস্ত্রসদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। এগুলোর ওপর ‘স্মল ফায়ার আর্মস’ লেখা রয়েছে। আটক মনির বেন আলী বিমানবন্দরে দাবি করেন, এগুলো সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ব্যবহূত হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার কাছে আছে। একেকটির দাম ১২০ ইউরো।

 তিনি এগুলো পরীক্ষা করে দেখতে এবং বিষয়টি জার্মান দূতাবাসকে জানাতে বলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, এগুলো জব্দ করার পর যাচাই করার জন্য র?্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে খবর দেওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এগুলো পরীক্ষার পর জানান, মাল্টিপারপাস কাজে এগুলো ব্যবহূত হয়ে থাকে। এগুলোর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

 

সর্বশেষ খবর